নিজস্ব সংবাদদাতা : সিএবি’র বিরোধীতাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার বেলা থেকে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল গোটা উলুবেড়িয়া।
বিভিন্ন জায়গায় দফায় দফায় চলে সড়ক ও রেল অবরোধ। ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয় উলুবেড়িয়া স্টেশনে।
ভাঙচুর চালানো হয় করমন্ডল ও তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেসেও। উলুবেড়িয়ার রেলের কন্ট্রোল প্যানেলেও ভাঙচুর চালানো হয়।
বিক্ষোভকারীদের ছোঁড়া পাথরের ঘায়ে আহত হন এক জিআরপি কর্মী ও করমন্ডল এক্সপ্রেসের চালক।
পাথরের আঘাতে আহত হয়েছেন ট্রেনের বেশ কিছু যাত্রীরাও। ট্রেন আটকে পড়ায় চরম দূর্ভোগের শিকার হন যাত্রীরা।
এদিন দেড়টা নাগাদ কয়েক হাজার মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরা প্রথমে অবরোধ করে মুম্বাই রোড।
নরেন্দ্র মোড়ের কাছে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের কুশপুতুল জ্বালানো হয়।
প্রায় আড়াই ঘন্টা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে মুম্বাই রোড। পুলিশ তাদের কাছে অবরোধ তোলার আবেদন জানালেও তাতে বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেনি বিক্ষোভকারীরা।
ততক্ষণে একে একে মুম্বাই রোডের বাগনানের লাইব্রেরী মোড়, পাঁচলা মোড় সহ বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ শুরু হয়ে যায়।
রাস্তার উপর গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করা হয় উলুবেড়িয়া গরুহাটা মোড়, উলুবেড়িয়া শ্যামপুর রাস্তার ধুলাসিমলা, বাগান্ডা সহ একাধিক জায়গায়।
স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা উলুবেড়িয়া। শেষমেষ প্রায় চারটে নাগাদ মুম্বাই রোডে যান চলাচল শুরু হয়।
যদিও সন্ধ্যা পাঁচটা পর্যন্ত অবরুদ্ধ ছিল বাগনান সহ অন্যত্র।এরপর ওই উন্মত্ত জনতা রেল অবরোধ শুরু করে উলুবেড়িয়া পশ্চিম কেবিন সংলগ্ন ডোমপাড়ায় লেবেল ক্রসিংয়ের কাছে।
অবরোধ চলাকালীন সেখানে এসে পড়ে আপ করমন্ডল এক্সপ্রেস। সেই সময় করমন্ডল এক্সপ্রেস লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে শুরু করে বিক্ষোভকারীরা।
পাথর ছুড়ে ভাঙচুর চালানো হয় উলুবেড়িয়া পশ্চিম কেবিনে। বিক্ষোভকারীদের ছোড়া পাথরের আঘাতে আহত হন এক জিআরপি কর্মী রিন্টু পাত্র সহ কিছু ট্রেন যাত্রীও।
আহত জিআরপি কর্মীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয় উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে। এর পরেই শুক্রবার বিকালে উলুবেড়িয়া স্টেশন ব্যাপক ভাঙচুর চালায় বিক্ষোভকারীরা।
ভেঙে ফেলা হয় টিকিট কাউন্টার সহ রিজার্ভেশন সেন্টার। ভাঙচুর করার পর সেগুলো ফেলে দেয়া হয় রেললাইনের উপর।
এর ফলে উলুবেরিয়া স্টেশনে আটকে পড়ে করমন্ডল এক্সপ্রেস তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস সহ বেশকিছু দূরপাল্লার ট্রেন।
পাশাপাশি বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়ে বহু দূরপাল্লার ট্রেন এবং বেশকিছু লোকাল ট্রেন। বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচল।
আতঙ্কে ট্রেনের দরজা-জানলা বন্ধ করে বসে থাকেন যাত্রীরা। এরপরই রেললাইনে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।
বেশ কিছুক্ষণ এই অবস্থা চলার পর উলুবেড়িয়া জিআরপি ঘটনাস্থলে পৌঁছে ট্রেনে আটকে থাকা যাত্রীদের উদ্ধার করে।
আতঙ্কে স্টেশন ছেড়ে পালিয়ে যায় যাত্রীরা। পরে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয় রেলের প্যানেল অফিস ও স্টেশন মাস্টারের ঘরে।
আতঙ্কে লুকিয়ে পড়েন সেখানে কর্মরত রেলের কর্মীরা। ভিতর থেকে জিআরপি থানায় তালা লাগিয়ে দেয় জিআরপি কর্মীরা।
প্রায় তিন ঘন্টা ধরে তান্ডব চালানোর পর সন্ধ্যা ছটা নাগাদ অবরোধ তুলে নেয় বিক্ষোভকারীরা। পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও র্যাফ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্টেশন ম্যানেজার মহঃ শামিম ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন বিক্ষোভকারীরা স্টেশনের চেয়ার থেকে বেঞ্চ সহ সমস্ত কিছু ভেঙে চুরমার করে দেয়।
প্যানেল অফিসে ভাঙচুর করে। আমাদের কর্মীরা আতঙ্কে লুকিয়ে পড়ে। তিনি বলেন বিক্ষোভকারীরা করমন্ডল ও তাম্রলিপি এক্সপ্রেস ট্রেনে ভাঙচুর চালিয়ে রেল লাইনে আগুন ধরিয়ে দেয়।
তিনি বলেন ভাঙচুর করার পর সমস্ত জিনিসপত্র রেলের লাইনে ফেলে দেয় বিক্ষোভকারীরা। পাশাপাশি সিগন্যাল গুলিও ভেঙে দেয়।
তিনি বলেন এখন যা পরিস্থিতি রাত এগারোটার আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া সম্ভব নয়।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন গোটা স্টেশন জুড়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে পাশাপাশি বেশ কয়েকটি কম্পিউটার ও টাকা পয়সা লুঠ করা হয়েছে।
আপদকালীন ভাবে পাঁশকুড়া থেকে খড়্গপুর পর্যন্ত শাটল ট্রেন চালানো হচ্ছে। যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে যত দ্রুত সম্ভব পরিষেবা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে।