নিজস্ব সংবাদদাতা : উলুবেড়িয়া পূর্ব কেন্দ্রে শাসকদলের ‘ভূমিপুত্র’ বনাম ‘বহিরাগত’র চাপা দ্বন্দ্বটা অনেকেরই জানা। সেই দ্বন্দ্বটাই আবারও যেন প্রকাশ্যে উঠে এলো উলুবেড়িয়া পুরসভার প্রাক্তন ভাইস-চেয়ারম্যান তথা বিশিষ্ট তৃণমূল নেতা আবাসউদ্দীন খানের বিস্ফোরক বক্তব্যে।
গতকাল উলুবেড়িয়া পূর্ব কেন্দ্রের বিভিন্ন অঞ্চলের কর্মীদের নিয়ে উলুবেড়িয়ার রবীন্দ্র ভবনে একটি রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করে তৃণমূল কংগ্রেস। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক পুলক রায়, উলুবেড়িয়া পূর্বের বিধায়ক ইদ্রিস আলি, উলুবেড়িয়া পূর্ব কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বেণুকুমার সেন, উলুবেড়িয়া পৌরসভার প্রশাসক অভয় দাস, আব্বাসউদ্দীন খান সহ বিভিন্ন অঞ্চলের নেতা-কর্মীরা।
এদিন সম্মেলনের মঞ্চে বক্তব্য পেশ করতে উঠেই পুলক রায়, কালীপদ মন্ডল, আরুনাভ সেন, সমীর পাঁজা সহ গ্রামীণ হাওড়ার একাধিক বিধায়ককে ধন্যবাদ জানান ছাত্র রাজনীতি করে উঠে আসা আব্বাসউদ্দীন খান। কিন্তু, তাঁর পাশেই মঞ্চে থাকা আরেক বিধায়ক ইদ্রিস আলিকে ধন্যবাদ জানাতে দেখা যায়নি আব্বাসউদ্দীন খানকে।
এদিন আব্বাসউদ্দীন খান বলেন, “শুধু বড়ো বড়ো কথা বলব আর মানুষের পাশে পৌঁছাব না বিষয়টা চলতে পারেনা। পুলক রায়, রাজা সেন, সমীর পাঁজার কেন্দ্রে দীর্ঘ দশ বছরে প্রচুর কাজ হয়েছে। আমরাও চাই আগামী দিনে উলুবেড়িয়া পূর্ব কেন্দ্রে আরও বেশি কাজ করতে।” বহিরাগত বিধায়কের কাজে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব যে মোটেই খুশি নয় এটি তারই বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এদিন আব্বাসউদ্দীন বলেন, “নলপুর থেকে উলুবেড়িয়া কালীবাড়ি পর্যন্ত গঙ্গার পাড় বাঁধিয়ে সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কেন হবে না এ কাজ? একাজ তো এমএলের কাজ। এই কাজ করতে হবে।”
কটাক্ষের সুরে তিনি বলেন, “লোক পুষে, লোক দিইয়ে ফেসবুক করিয়ে ভোট হয়না। ভোট করেন দলের নেতা-কর্মীরা। তার ফল পায় এমএলএ-এমপিরা। অথচ নেতা-কর্মীরাই প্রকৃত সম্মান পাননা। এ হতে পারেনা।” এদিন আব্বাসের বক্তব্যের মাঝেই কর্মীদের গলায় ‘আব্বাসউদ্দীন খান জিন্দাবাদ’ এই ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে রবীন্দ্র ভবন প্রাঙ্গণ। তাদের দেখিয়ে আব্বাসউদ্দীন বলেন, “কর্মীদের এই আবেগ আপনি রাখতে পারবেন? পারবেন না। আমি বেরিয়ে চলে যাব। এরাও বেড়িয়ে চলে যাবে। কিন্তু, আমরা ডিসিপ্লিন মেনে দল করি। নেত্রীকে ভালোবাসি। দলকে ভালোবাসি।”
সবশেষেই অবশ্য বড়ো ‘বোমা’টা ফাটান আব্বাসউদ্দীন। তিনি বলেন, “আমার প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছে আছে।কিন্তু দল যাকে প্রার্থী করবে তাকেই আমরা মেনে নেব। দলের ঊর্ধ্বে কেউ নয়।” এর পাশাপাশি তিনি জানান, “উলুবেড়িয়ার মানুষের আবেগকে প্রাধান্য দিয়ে ভূমিপুত্রকে প্রার্থী করার আর্জি জানিয়ে আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অনুরোধ জানাব। ইদ্রিস সাহেবকে ফোনে বলেছি আপনি সই করবেন। সেই কপি দিদির কাছে পাঠাব।” আর এতেই যে ‘ভূমিপুত্র’ বনাম ‘বহিরাগত’এর দ্বন্দ্বটা আরও প্রকট হল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না বলেই মতামত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
প্রসঙ্গত, এই কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন প্রাক্তন আইপিএস অফিসার হায়দার আজিজ সফি। তিনি এই কেন্দ্র থেকে ২০১১ ও ২০১৬ সালে তৃণমূলের হয়ে জেতেন। তাঁর মৃত্যুর পর এখানে উপ-নির্বাচনে তৃণমূল এখানে বসিরহাটের প্রাক্তন সাংসদ তথা বিশিষ্ট আইনজীবী ইদ্রিশ আলিকে প্রার্থী করে। প্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম ঘোষণার পরেই দলের নেতা-কর্মীদের একাংশ বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন।
তাঁদের দাবি ছিল, ‘বহিরাগত’কে প্রার্থী করা চলবে না।পরে অবশ্য শীর্ষ নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে সেই ক্ষোভ প্রশমিত হয়। কিন্তু, একুশের বিধানসভার প্রাক্কালে সেই দ্বন্দ্ব আবারও প্রকাশ্য এলো বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। আগামী একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই কেন্দ্রে ‘ভূমিপুত্র’কে টিকিট দেবে নাকি ভরসা রাখবে ‘বহিরাগত’ প্রার্থীতেই —এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আরও কয়েকমাস অপেক্ষা করতে হবে।