নিজস্ব সংবাদদাতা : “প্রেম করার জন্য সরস্বতী পুজোর দিনটার সঙ্গে কোনও কিছুর যেন তুলনা হয় না”—বাগানে ঘুরতে ঘুরতে একথাই বলছিল উলুবেড়িয়া কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র দীপেন্দু।আবার প্রেমিকা শর্মিষ্ঠাকে নিয়ে আন্দুল থেকে এসেছিল সদ্য চাকরি পাওয়া আশিস নস্কর।আশিসের কথায়,”বছরে এই একটা দিন স্মরণীয় করে রাখার মতো”।
বছর ঘুরে ফের হাজির প্রেমের পার্বণ! সরস্বতী পুজো মানেই বাঙালির ভ্যালেন্টাইন্স ডে।শহরের পাশাপাশি গ্রামেও এই রেওয়াজ বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই চালু হয়েছে।রাতভর ঝিরিঝিরি বৃষ্টির পর সকাল থেকে আকাশের মুখভার হলেও রোদওঠার সাথে সাথে এবারও গ্রামীণ হাওড়ার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রেমের মরসুমে মেতে উঠল বাঙালি যুগলেরা।
যুগলদের ভিড় উপচে পড়তে দেখা গেল আমতা-১ ব্লকের উদং কালীমাতা আশ্রম চত্বরে।এখানে কোনো সরস্বতী পুজো না হলেও প্রতিবছর এই বিশেষ দিনে ভিড় জমান হাজার হাজার মানুষ।এবারেও সেই ভিড় অব্যাহত।দামোদর নদের তীরবর্তী এই আশ্রম প্রাঙ্গণে রয়েছে অনন্য কারুকার্যমন্ডিত একাধিক মন্দির,সুসজ্জিত মরসুমি ফুলের বাগান,রঙবেরঙের বিভিন্ন প্রজাতির পাখি,অ্যাকোয়ারিয়ামে রঙিন মাছ।সাথে দামোদরের বুকে নৌকাবিহার।এই অনুপম সৌন্দর্যের টানে এবারও বহু দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এসেছেন।প্রসঙ্গত,উদং কালীমাতা আশ্রম ইতিমধ্যেই জেলাস্তরে পর্যটন কেন্দ্র ও পিকনিক কেন্দ্র রূপে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।গোলাপ,ডালিয়া,চন্দ্রমল্লিকার মতো নয়নাভিরাম বিভিন্ন ফুলের সমারোহে বর্ণময় হয়ে উঠেছে এই গ্রামীণ আশ্রম।সকাল থেকেই ভিড় জমতে শুরু করে আশ্রম চত্বরে।বেলা যত গড়িয়েছে ভিড়ও তত বেড়েছে।ভিড়ের সাথে সেল্ফির হিড়িক সামাল দিতে কার্যত হিমশিম খেয়েছেন স্বেচ্ছাসেবকরা।শেষ দুপুরে আশ্রমে পৌঁছেই মনে হতে পারত গণ-বিবাহের মতোই গণ-প্রেমেরও কোনও অনুষ্ঠান চলছে।বিভিন্ন রঙের উজ্জ্বল তাঁতের শাড়ি আর রঙিন পাঞ্জাবির ভিড়ে চোখ ধাঁধিয়ে ওঠার উপক্রম।তাঁদেরই এক জন মধুমিতা মুচকি হেসে বললেন,”আজকের দিনে না বেরোলে প্রেমের মান থাকে নাকি!”শুধুমাত্র যুগলরাই যে ভিড় জমিয়েছিলেন তা নয়।বহু বন্ধুবান্ধব একসাথে দিনটিকে উপভোগ করতে হাজির হয়েছিলেন উদংয়ের এই আশ্রমে।বহু স্কুল পড়ুয়াও বিদ্যালয়ে পুষ্পাঞ্জলি ও প্রীতিভোজের পর ঘুরতে এসেছিল এখানে।
তাদেরই একজন অনির্বান পাল।স্থানীয় উদং উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর পড়ুয়া অনির্বাণের কথায়,”বাড়ির কাছে হলেও প্রতিবছরই আজকের দিনে স্কুলের ঠাকুর দেখে ভিড় দেখতে আশ্রমে আসি”।এরকমই অসংখ্য ছাত্র-যুব-নারীর ভিড়ে জমে উঠেছিল গ্রামীণ হাওড়ার এই পর্যটন স্থল।আশ্রম চত্বরের বাইরে মেলাও বসেছিল।উদং কালীমাতা আশ্রমের কর্তা গোপাল চন্দ্র ধাড়া জানান,”প্রতিবছরের মতো এবছরও এদিন কয়েক হাজার মানুষ এখানে এসেছেন।আশ্রম চত্বরে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য সম্প্রতি সি.সি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।তার সাথে এদিন বহু স্বেচ্ছাসেবক দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন”।আশ্রম চত্বরে এদিন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্ন দেখার উজান গাঙ’-এর পক্ষ থেকে দর্শক ক্যুইজেরও আয়োজন করা হয়েছিল।বহু মানুষ অত্যন্ত উৎসাহের সাথে এই প্রশ্নোত্তর পর্বে যোগ দেন।এর পাশাপাশি,স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির পক্ষ থেকে মাইকিংয়ের মাধ্যমে আগত দর্শনার্থীদের কাছে বাগানের ফুল-গাছে হাত না দেওয়া ও আশ্রম চত্বরকে পরিষ্কার রাখার অনুরোধ জানানো হয়।দিনেরশেষে,স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির সদস্যরা আশ্রম চত্বরে দর্শনার্থীদের ফেলে যাওয়া বিভিন্ন খাবারের প্যাকেট-পলিথিন সংগ্রহ করে আশ্রম প্রাঙ্গণকে নির্মল করে তোলেন।প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়।বেলায় আশ্রম চত্বরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে আশ্রম চত্বরে আসেন আমতা থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক টিম্পু দাস।