বন দপ্তরের হাতে নয়,উদ্ধার হওয়া কচ্ছপকে জলাশয়েই ছেড়ে দিলেন উদয়নারায়ণপুরের শিক্ষক,খুশি পরিবেশপ্রেমীরা

By নিজস্ব সংবাদদাতা

Published on:

নিজস্ব সংবাদদাতা : একটা সময় ছিল গ্রামাঞ্চলে বনদপ্তরের উপস্থিতি ছিল বেশ দুষ্প্রাপ্য। ব্যক্তিগত উদ্যোগেই সচরাচর জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ হত। কিন্তু, দিন যত গড়িয়েছে পরিবেশ দূষণের হারও তত বৃদ্ধি পেয়েছে। পক্ষান্তরে, জীববৈচিত্র্যও অস্বাভাবিক হারে হ্রাস পেতে শুরু করেছে। এরকমই এক সংকটময় পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ পরিবেশ তথা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষনের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে থাকেন। এরপর ২০১৫ সাল নাগাদ গতানুগতিক পরিস্থিতি ক্রমশ বদলাতে শুরু করে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষনে এগিয়ে আসে। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাথে প্রচার চলতে থাকে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এতেই গতি পায় দীর্ঘদিন ধরে খুঁড়িয়ে চলতে থাকা সংরক্ষণ। আর এই কর্মকান্ডে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসে রাজ্য সরকারের বন বিভাগের কর্মীরা।

মূলত, এই দপ্তরের সাহায্যেই সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়তে থাকে। গ্রামীণ হাওড়ায় বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিয়মিত প্রাণী উদ্ধার করে বনদপ্তরের হাতে তুলে দেওয়ার খবর আসতে থাকে। কিন্তু, এতে আবার এক নতুন সমস্যার উদ্রেক ঘটে। এলাকার প্রাণীর এলাকাছাড়া হওয়া বাড়তে থাকে। পরিবেশে তাদের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে যে জনসচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা শুরু হয়েছিল তা-ই প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়তে শুরু করে। আসলে বনদপ্তরের হাতে কোন পরিস্থিতিতে প্রাণীদের তুলে দিতে হয় তা না জানার ফলেই এই সমস্যা বাড়তে শুরু করে। বিশিষ্ট পরিবেশকর্মী ও গবেষক সৌরভ দোয়ারীর মতে, “অসুস্থ, আহত, শাবক ছাড়া কোনো প্রাণীকেই বনদপ্তরের হাতে তুলে দিয়ে এলাকা ছাড়া উচিত নয়। তবে বিষাক্ত বা এলাকার মানুষের সাথে দ্বন্দ আছে এরকম প্রাণীর ক্ষেত্রেও বনদপ্তরের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন।”

সূত্রের খবর, করোনা পরিস্থিতিতেই এলাকার প্রাণী এলাকাতেই সংরক্ষণের প্রচার শুরু হয়। সোশ্যাল মিডিয়া মারফত আমতা, উলুবেড়িয়ার একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেই প্রচারকার্যে এগিয়ে আসে। সেই প্রচারে সাড়া দিয়েই এগিয়ে এলেন গ্রামীণ হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর ব্লকের পালিয়াড়া গ্রামের শ্যামল জানা। জানা গেছে, পেশায় শিক্ষক শ্যামল জানা বিগত তিন দিনে স্থানীয় এলাকা থেকে দু’টি তিলকাছিম (Indian flapshell Turtle) উদ্ধার করেন। শ্যামল জানা জানান, “আশেপাশের অনেকে বনদপ্তরে তুলে দেওয়ার কথা বললেও আমি কচ্ছপ দু’টিকে তাদের নিজস্ব বাসস্থানে সংরক্ষণ করতে উদ্যোগী হই। এর জন্য বেশ কয়েকজন পরিবেশপ্রেমীর সাহায্য নিই।” শ্যামল বাবু জানান, এলাকার একটি ঝোপঝাড় যুক্ত অঞ্চলের উপযুক্ত জলাশয়ে গতকালই কচ্ছপ দু’টিকে পুনর্বাসিত করা হয়। শ্যামল বাবুর এহেন উদ্যোগে খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় ইলেকট্রিক ব্যাবসায়ী প্রদীপ মাজী জানান, “সচরাচর আমরা বন দপ্তরের হাতে তুলে দিই। তবে এই বিষয়টা সেভাবে ভেবে দেখিনি। তবে এখন এর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারলাম।” দোকানে আসা ক্রেতাদের মধ্যেও বন্যপ্রাণের এই পুর্নবাসনের বিষয়টি নিয়ে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেবেন বলে প্রদীপ মাজী জানান।