নিজস্ব সংবাদদাতা : গত শতকের আশির দশকেও বাংলার সর্বত্র ডাকের সাজের প্রচলন ছিল। ডাকের সাজ মানেই আভিজাত্য, ডাকের সাজ মানেই এক অনন্য শিল্পের ছোঁয়া। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জৌলুস হারাতে বসে বাংলার ঐতিহ্যবাহী ডাকের সাজ। একবিংশ শতকের সূচনা লগ্নে ডাকের সাজের পরিবর্তে বাজার দখল করা শুরু করে তার ও জরির বিভিন্ন কাজ। হাতেগোনা কিছু প্রতিমা বাদে বেশিরভাগ জায়গাই দখল করেছিল জরি ও তারের তৈরি বিভিন্ন শৌখিন কাজ। তবে সময়ের সাথে সাথে ফের নিজের হারানো জমি ফিরে পাচ্ছে গ্রাম বাংলার ডাকের সাজ। আবারও বিভিন্ন পুজো মন্ডপে ডাকের সাজে অপরূপা রূপে সেজে উঠছেন মৃন্ময়ী মা। আর তাতেই আশার আলো দেখছেন গ্রামীণ হাওড়ার শ্যামপুরের গুটিনাগোড়ী গ্রামের ডাকের সাজের শিল্পীরা। দামোদর লাগোয়া শ্যামপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম গুটিনাগোড়ী। সেই গ্রামেরই অধিকারী বাড়িতে এখন চরম ব্যস্ততা। হবেই না বা কেন! আর ক’টা দিন তো মাত্র হাতে রয়েছে। তা-ই রাতদিন জেগে চলছে শেষ মুহুর্তের কাজ। বছর পনেরো আগে কোলকাতা থেকে ডাকের কাজ শিখে এসে বাড়িতে কাজ শুরু করেন গ্রামেরই যুবক সুকান্ত অধিকারী। বিস্তারিত জানতে নীচে পড়ুন…
তাঁর কাজে সামিল হন স্ত্রী নমিতা অধিকারী। সুকান্ত বাবু জানান, কোলকাতা বা পার্শ্ববর্তী মার্কেট থেকে কাঁচামাল নিয়ে আসা হয়। নিপুণ শৈল্পিক দক্ষতার প্রতি আত্মবিশ্বাস রেখেই স্বপ্ন দেখা শুরু। একসময় শুধু নিজেরাই বাড়িতে এই সামগ্রী তৈরি করতেন। এখন তাদের থেকে কাজ নিয়ে আশপাশের অনেকেই রোজগারের মুখ দেখছেন। পুজোর আগে কাজের চাপও প্রবল। অক্লান্ত পরিশ্রম আর শৈল্পিক ভাবনায় ভর করে দেড় দশকে নিজেদের ব্যবসার পরিসরও বেশ কয়েকগুণ বেড়েছে। আগামীতে এই ব্যবসাকে আরও বড়ো করার স্বপ্ন দেখেন অধিকারী দম্পতি। দেড় দশকের এই চলার পথটা খুব একটা মসৃণ ছিলনা। কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে কখনো কখনো ডাকের সাজের চাহিদায় বেশ খানিকটা কোপ পড়েছে। তবে এখন অনেকটা আশার আলো দেখছেন শিল্পী সুকান্ত অধিকারী। সময়ের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডাকের সাজের চাহিদা। উলুবেড়িয়া, শ্যামপুর, আমতা, বাগনান, পাঁচলা সহ পার্শ্ববর্তী এলাকার মৃৎশিল্পীরা ন্যায্য মূল্যে তাদের থেকে এই সাজ সংগ্রহ করেন। যদিও এখনও সেভাবে কোলকাতার বাজার ধরতে পারেনি তারা। তবে আশার আলোয় বুক বেঁধে প্রতিকূলতার মাঝেই লড়াই করে চলেছেন শিল্পী দম্পতি।