নিজস্ব প্রতিবেদক : সময়টা উনবিংশ শতকের অন্তিমলগ্ন। শিকাগোর ধর্ম মহাসভার মঞ্চ কাঁপিয়ে দেশে ফিরেছেন বিশ্ববরেণ্য বাঙালি সন্তান। শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের ভক্তের বাড়িতে মন্দির প্রতিষ্ঠা উপলক্ষ্যে হাওড়ায় গঙ্গার ঘাটে পৌঁছলেন স্বামীজি। স্বামীজির স্মৃতিধন্য সেই ঘাট ‘রামকৃষ্ণপুর ঘাট’ নামেই অধিক পরিচিত। যদিও এই পরবর্তীকালে এই ঘাটের নাম হয় ‘চিন্তামণি দে ঘাট’।
ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, শ্রীরামকৃষ্ণের শিষ্য ছিলেন হাওড়ার রামকৃষ্ণপুর লেনের নবগোপাল ঘোষ। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের মৃত্যুর পর নবগোপাল ঘোষ তাঁর বাড়িতে রামকৃষ্ণদেবের মন্দির প্রতিষ্ঠা করার জন্য স্বামীজিকে অনুরোধ করেন। সে জন্যই ১৮৯৮ সালের ৬ ইফেব্রুয়ারি, মাঘী পূর্ণিমায় ১৫ জন সন্ন্যাসীকে নিয়ে বেলুড় মঠ থেকে নৌকায় রামকৃষ্ণপুর ঘাটে গিয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। আলমপুরের মঠ থেকে তিনটি নৌকা পেড়িয়ে তিনি হাজির হন নবগোপালের বাড়িতে। সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন রামকৃষ্ণ দেবের মন্দির।
নবগোপালের পৌত্র তাপস ঘোষ জানান, গঙ্গার ঘাট থেকে তাঁদের বাড়ি অব্ধি স্বামীজী খালি পায়ে হেঁটে আসেন। তাঁর কন্ঠে জেগেছিল গিরীশ ঘোষ রচিত, “কে রে ওরে দিগম্বর” গান। তিনি নবগোপালবাবুর বাড়িতে শ্রীরামকৃষ্ণের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। ফেরার সময়ে স্বামীজি তাঁর ব্যবহৃত সিল্কের পাগড়ি ও কিছু দুষ্প্রাপ্য দ্রব্য দিয়ে আসেন সেখানে। এখনও প্রতি বছর ওই দিনে বেলুড় মঠ থেকে সন্ন্যাসীরা একই ভাবে নবগোপালবাবুর বাড়িতে যান বলে জানা যায়।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে এই ঘাট রাজ্যের হেরিটেজের তালিকায় স্থান পায়। হাওড়ার স্বামী বিবেকানন্দ সার্ধশতবর্ষ জন্মোৎসব উদ্যাপন কমিটির প্রস্তাব বিবেচনা করে ওই ঘাটকে ‘হেরিটেজ’ হিসাবে ঘোষণা করে পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশন। ২০১৩ সালে রামকৃষ্ণপুর ঘাটে একটি ফলক বসানো হয়েছে। স্বামীজির পৈতৃকভিটার অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ এই ফলকের আবরণ উন্মোচন করেছিলেন।