নিজস্ব প্রতিবেদন : বয়স পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। ছিপছিপে শরীরের মানুষটি পেশার তাগিদে প্রতিদিন সাইকেল চালাচ্ছেন প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। একদিন বা দু’দিন নয়, এভাবেই টানা পাঁচ মাস ধরে নিজের কর্মস্থলে আসছেন কাজপাগল এই মানুষটি। অদম্য ইচ্ছাশক্তি যে মানুষকে কত কষ্ট সওয়াতে পারে তার প্রমান হয়তো হুগলী জেলার সিঙ্গুরের বেড়াবেড়ি গ্রামের নারায়ণচন্দ্র মাঝি। গ্রামীণ হাওড়ার আমতা সাব-পোস্ট অফিসে পোস্টাল অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে কর্মরত তিনি। আগে বাসে নিয়মিত অফিস যাতায়াত করতেন। তখন সব স্বাভাবিক ছিল।
তারপর দীর্ঘ লকডাউনে বাস বন্ধ ছিল। এখখনও যানবাহন পরিষেবা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক নয়। তার উপর পাব্লিক ট্রান্সপোর্টে যাওয়া আসার ঝক্কি! কিন্তু, পোস্ট অফিস লকডাউন জুড়ে খোলা ছিল। তাই অফিস যাবেন কীভাবে? সাইকেলই ভরসা নারায়ণবাবুর। রোজ ভোর ৫ টা’য় সিঙ্গুরের বাড়ি থেকে সাইকেল নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। নালিকুল, ফুরফুরা, জগৎবল্লভপুর, মুন্সিরহাট পেরিয়ে আমতায় পৌঁছান ৮.৪৫ নাগাদ। প্রায় দীর্ঘ ৬৫ কিমি রাস্তা। তারপরই ফ্রেশ হয়ে কাজে বসা। কাজ সেরে আবার সন্ধ্যা ৬টা’র পর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বাড়ি পৌঁছাতে প্রায় রাত ১০টা। এটাই নারায়ণবাবুর পাঁচ মাসের রোজনামচা।
১৯৯৭ সালে গ্রামীণ ডাক সেবক হিসাবে হুগলী ডিভিশনে নিজের কর্মজীবন শুরু করেন। গত প্রায় ৩ বছর ধরে আমতায় পিএ হিসাবে আছেন।বিয়ে করেননি। কাজপাগল মানুষটির কথায়, “বাড়িতে রয়েছেন সত্তোরোর্ধ্ব মা। তাঁর টানেই বাড়ি ফিরে যাওয়া। দিনের শেষে তাঁর মুখ দেখতে পেলেই সব কষ্ট দূর হয়ে যায়।” একইসঙ্গে তিনি বলেন, “ছোট থেকেই সাইকেল চাপায় পটু। তাই দীর্ঘ পথে খুব একটা অসুবিধা হয়না। গাড়ি চাপা একবার শিখতে গিয়েছিলাম। দুর্ভাগ্যবশত অ্যাক্সিডেন্ট করেছিলাম। তারপর থেকে আর গাড়ি চাপার চেষ্টা করিনি। সাইকেল নিয়েই গত পাঁচ মাস যাতায়াত করছি।”
অফিসের পাশাপাশি বাড়িতে রয়েছে গোরু ও চাষের জমি। ছুটির দিনে গরু ও জমি নিয়েই ব্যস্ত থাকেন স্বভাবে লাজুক মৃদুভাষী এই কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী। নারায়ণের এহেন লড়াইয়ে খুশি তাঁর সহকর্মীরাও। সহকর্মী রাজকুমার দে’র কথায়, “নিতান্ত সাদামাটা জীবনযাপন করলেও নারায়ণ কাজের জায়গায় অত্যন্ত সময়নিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল। ও অত্যন্ত সরল মানসিকতার। সবসময় হাসিমুখে সবার সাথে মেলামেশা ওর।” সহকর্মীদের আক্ষেপ একটাই, “তাঁকে গাড়ি কেনানো গেল না।”