নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলায় মনীষীদের মূর্তি নিয়ে রাজনীতি নতুন কিছু নয়। একুশের বিধানসভা ভোটের আগেই রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, নেতাজী, বল্লভভাই প্যাটেল, বীরসা মুন্ডার মতো নমস্য ব্যক্তিত্বরা রাজনৈতিক প্রচারের কার্যত হাতিয়ার হয়ে উঠেছেন। কোন রাজনৈতিক দল কোন মনীষীকে কতটা সম্মান দিল কিমবা কতটাই বা অবহেলা করলো তা নিয়ে জোর আলোচনা চলছে রাজ্য রাজনীতিতে।
তবে এসবের মধ্যেও একেবারে হেলদোল নেই হাওড়ার বি-গার্ডেন থানা এলাকার শিব বাবুর। কেরিয়ারের ঝুলিতে একাধিক ডিগ্রি থাকলেও আপন ভোলা শিব বাবু দীর্ঘ ছাব্বিশ বছর ধরে আপন খেয়ালে গড়ে চলেছেন মনীষীদের আবক্ষ মূর্তি। না কোনো বিক্রির জন্য নয়। শুধু মাত্র নেশার টানে মনীষীদের মূর্তি গড়ন তিনি। পেশা বলতে প্রাইভেট টিউশানি। শিববাবুর বাড়িতে রয়েছে দুই বোন।
মূর্তি গড়ার অদ্ভুত নেশা যে কেমন করে সময়কে গ্রাস করেছে তা বুঝতে তিনি বুঝে উঠতেই পারেননি। তাই আর সংসার করাও হয়ে ওঠেনি। বয়স এখন ষাট ছুঁই ছুঁই। বাবা শচীন্দ্রনাথ ঘোষ ছিলেন হাওড়া নামী গেস্ট কিন কোম্পানিতে কর্মরত। সেই পুত্রের বসবাস ৯/১ আন্দুল সেকেন্ড বাই লেনে।
কিন্তু কেন এই মনীষী গড়ে চলা? —এই প্রশ্নের উত্তরে শিববাবু জানান, “ছেলেবেলায় ঠাকুর তৈরি দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে এই কাজ করবো বলে মনস্থির করি। মাটির অবয়ব তৈরি করে তার ছাঁচ তৈরী করা হয়। পরে সেই ছাঁচে ফাইবার ঢেলে তৈরী হয় অবয়ব।” দেশ বিদেশের শতাধিক মনীষীর মূর্তি শোভা পাচ্ছে শিব বাবুর বাড়ির আনাচে কানাচে।
এই মূর্তি তো বিক্রি করতে পারেন?—এই প্রশ্ন শুনে রীতিমতো অবাক শিববাবু। দ্ব্যর্থ ভাষায় তাঁর সাফ উত্তর, “রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ দের বিক্রি করবো? এ হয় না।” তাঁর বাড়িতে মূর্তি তৈরির কাজ ও সংগ্রহ দেখতে বহু প্রথিতযশা মানুষ এসেছেন। তিনি সকলের কাছেই একটাই প্রশ্ন রেখেছেন।
এ বাড়িতে এই মূর্তিগুলি যদি সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করেন?— তবে সকলেই আশ্বাস দিয়েই চলে গিয়েছেন। কেউ তাঁর কথা রাখেনি। আশাতেই দিন গুনছেন বিগার্ডেনের এই প্রৌঢ়। একত্রে শতাধিক মনীষীর অবয়ব দেখলে একটা মিউজিয়াম মনে হতে পারে। নবান্ন থেকে মাত্র দেড় কিমি দূরে মনীষী মিউজিয়ামের ভবিষ্যত নিয়ে তাই আক্ষেপ ঝরে পড়ল শিববাবুর কন্ঠে।