নিজস্ব সংবাদদাতা : পীরের দরগায় হয় শিবের গাজন৷ কি চমকে গেলেন? চমক লাগলেও এটাই সত্যি৷ আজানের সুরে মিশে যায় শিবস্তুতি৷ থাকে না ধর্মের কোনও ভেদাভেদ৷ এমনই মিলনের ছবি ধরা পড়ে হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া থানার বানীবন গ্রামের পীর বিলাসের দরগায়৷ বানীবন গ্রামের পীরপল্লির মূল আকর্ষণই হল পীর আব্বাসউদ্দিন শাহের কবরস্থান৷ আর এই কবরস্থানই সাধারণের কাছে জঙ্গল বিলাস পীরে কবর নামে পরিচিত৷ দরগাটির গড়নও খানিক ভিন্ন৷ বাংলার রীতির চারচালা মন্দিরের মতো এর গড়ন৷ সাধারণত মসজিদের প্রবেশপথ পূর্ব দিকে হয়৷ কিন্তু এই মসজিদের প্রবেশপথ দক্ষিণমুখী৷ দরজাতেও দেখা যায় মন্দিরের ভাস্কর্য শৈলী৷ মাসভর এই বাণীবন এলাকার কিছু মানুষ গাজন উৎসব পালন করেন৷ আর চৈত্র সংক্রান্তির দিন বাণীবনের অন্তর্গত বৃন্দাবনপুর এবং তার পার্শ্ববর্তী জগৎপুর গ্রামের গাজন দুটি পীর জঙ্গন বিলাসের দরগায় এসে সমবেত হয়৷
প্রথমে পীর জঙ্গল বিলাস সাহেবের মসজিদের চারপাশের স্থায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলিতে গিয়ে তার শ্রীবৃদ্ধি কামনা করে ব্যবসায়ীদের আশীর্বাদ দেওয়া হয়৷ তারপর ঢাক ও কাঁসির বাদ্য সহযোগে বিলাসের মসজিদটি পরিক্রমা করা হয়৷গাজন দুটির মূল সন্ন্যাসী সন্ন্যাস ধর্মবিহিত অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মসজিদে গিয়ে পীরের উদ্দেশে পুজো নিবেদন করেন৷ এরপর গাজনের দলদুটির সমস্ত সন্ন্যাসী পীরের মাজারের পূর্বদিকে পশ্চিমমুখী হয়ে কয়েকটি সারিতে দাঁড়িয়ে পড়েন৷ সামনে থাকেন দুই গাজনের মূল সন্ন্যাসী৷ এরপর কৌলিক অধিকার সূত্রে বৃন্দাবনপুর গ্রামের ভুঁইয়া পরিবারের কোনও এক ব্যক্তি সারিবদ্ধ সন্ন্যাসীগণের সম্মুখে উত্তরমুখ বসে দীর্ঘ ছড়া পাঠ করেন৷ এই ছড়া পাঠকে ‘দ্বারমুখ’ বলা হয়৷ ছড়া পাঠের সঙ্গে মূল সন্ন্যাসীদ্বয়কে অনুসরণ করে সারিবদ্ধ সন্ন্যাসীগণ নানা রকম মুদ্রা সহকারে মাথাচালা, বেতনাড়া ও সন্ন্যাসধর্ম অনুসারে শিব পুজোয় পালনীয় সমস্ত রীতি পালন করেন৷ পীর জঙ্গল বিলাস বাণীবনের গ্রাম দেবতা৷ মূলত তিনি বাঘের দেবতা বা পীর হিসাবে পরিচিত হলেও ভক্তজনের বিশ্বাস, তিনি সব বিপদের পরিত্রাতা৷ সে কারণে আজও গরুর প্রথম দুধ কিংবা গাছের প্রথম ফল পীর জঙ্গলকে ভোগ নিবেদন করেন৷