কার্গিল যুদ্ধ : চমরিগাই খুঁজতে গিয়ে মেষপালকই প্রথম পাক অনুপ্রবেশকারীদের দেখেছিলেন, জানুন সেই ইতিহাস

By নিজস্ব সংবাদদাতা

Published on:

নিজস্ব সংবাদদাতা : বিংশ শতকের অন্তিম লগ্ন। সালটা ১৯৯৯। তারিখটা ৩ রা মে। পেশায় রাখাল তাশি নামগিয়াল বায়নোকুলার হাতে নিজের চমরিগাইকে খুঁজতে বেড়িয়েছিলেন। বছর ছ’ত্রিশের যুবক তাশি লাদাখের কার্গিল শহর থেকে ৬০ কিমি দূরে ছোট্ট গ্রাম ঘারকোনেজের বাসিন্দা৷ অন্যান্যদিনের মতোই চমরিগাইকে খুঁজতে জুব্বার লাংপা নদী ধরে হাঁটতে হাঁটতে বায়নোকুলারে চোখ রেখেছিলেন। সেদিন বায়নোকুলারে তাশি যে দৃশ্য দেখেছিলেন সে-ই দৃশ্যই সূচনা করেছিল কার্গিল যুদ্ধের। রাখাল তাশি দেখেন, একদল লোক পাক সেনার পোশাক পড়ে মাটি কোপাচ্ছে৷ তাঁর বাড়ি থেকে ৫ কিমি দূরেই এই কাজ চলছিল৷

তাশি নামগিয়াল

সেনার পাশাপাশি বেশ কয়েকজনের দেহে পাঠানদের পোশাকও ছিল। কিন্তু, তাশি সেই মুহুর্তে বুঝতে পারেননি কেন তারা মাটি কোপাচ্ছে। দলে কতজন ছিল তাও তিনি বুঝে উঠতে পারেননি। তবে অনুমান করতে পেরেছিলেন পাক সেনার বেশধারী লোকগুলো বাঙ্কার বানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে তাশি জানিয়েছিলেন, “এই মাটির লোক ওরা ছিল না৷ সীমান্তের ওপার থেকে এসেছিল লোকগুলো তা বুঝতে পেরেছিলাম৷”

তারপর অবশ্য বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট করেননি এই কাশ্মীরি যুবক। সাথে সাথেই পৌঁছে যান নিকটবর্তী সেনা পোস্টে। বিষয়টি সম্পর্কে পোস্টের আধিকারিকদের জানান। পোস্টের বেশ কয়েকজন সেনা আধিকারিক তাঁকে সঙ্গে নিয়ে ফের সে জায়গায় গিয়ে তাঁর দেওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই করেন৷ উল্লেখ্য, ভারতীয় সেনার কাছে পাক অনুপ্রবেশকারীদের ভারতে প্রবেশের খবর ছিল৷ সেই তথ্যের সাথে তাশির দেওয়া তথ্য মিলে যেতেই তৎপর হয়ে ওঠে ভারতীয় সেনা৷

তারপরের ঘটনা ইতিহাস৷ সে ইতিহাস আজও ভোলেনি ভারতবাসী। দেশমাতাকে রক্ষা করতে সীমানায় সেদিন প্রাণ দিয়েছিলেন ভারতমাতার বহু বীর সন্তান। তাঁদের অকুতোভয় সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই ভারতের পুণ্যভূমিতে সেদিন রচিত হয়েছিল এক ইতিহাস। সেদিন ভারতবাসী দেখেছিল ভারতীয় সেনার অদম্য লড়াই।

ঠিক ২১ বছর আগে কার্গিলের মাটি থেকে পাক সেনাবাহিনীকে তাড়িয়ে ভারত মাতার ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা উড়িয়ে কার্গিল যুদ্ধের জয়ধ্বজা উড়িয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর বীর যোদ্ধারা। ১৯৯৯ সালের ২৬ শে জুলাই এই যুদ্ধে জয়ের কথা সরকারিভাবে ঘোষণা করেছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অপারেশন বিজয়’। তা-ই ২৬ শে জুলাই দিনটিকে স্মরণীয় ও বরণীয় করে রাখতে প্রতি বছর এই দিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কার্গিল বিজয় দিবস পালিত হয়।