নিজস্ব সংবাদদাতা : বিশ্বজুড়ে ধর্ম নিয়ে যখন এতো হানাহানি, রক্তপাত করোনার আবহেই সেই ধর্মের বেড়াজালকে ছিন্ন করে একের পর এক সম্প্রীতির অনন্য নজির গড়ছেন গ্রামীণ হাওড়ার বেশ কিছু মানুষ। ঘড়ির কাঁটায় সকাল ১১টা। লকডাউনের আর পাঁচটা দিনের মতোই বাড়িতে সময় কাটাচ্ছিলেন। হঠাৎই শাজাহান বাড়িতে এসে জানায় রক্ত দিতে হবে। শামসুল ফেলতে পারেনি শাজাহানের কথা। সাথেসাথেই প্রস্তুত হয়ে শাজাহানের গাড়িতে চেপেই হাসপাতালে গিয়ে রক্তদান করে বাঁচাল একটা প্রাণ। এই ঘটনারই সাক্ষী থাকল গ্রামীণ হাওড়া।
সূত্রের খবর, গত ২৮ শে এপ্রিল রাতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাট থানার বারনানের ৭৬ বছরের শুধাংশু শেখর চক্রবর্তী বাড়িতে পড়ে যান। তার বাম পা ও হাত ভেঙে যায়। পরের দিন অর্থাৎ ২৯ শে এপ্রিল উলুবেড়িয়ার একটি বেসরকারী হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর চিকিৎসকরা তাঁর অপারেশনের প্রস্তুতি শুরু করেন। সেইমতো ওই বৃদ্ধের ব্লাড গ্রুপ B নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের খোঁজ শুরু হয়। লকডাউনের জেরে একদিকে বিভিন্ন ব্লাডব্যাঙ্কে রক্তের আকাল ও অন্যদিকে রক্তের গ্রুপ বি নেগেটিভ। অনেক খোঁজাখুজির পর গ্রামীণ হাওড়ার একটি ব্লাড ব্যাঙ্ক ওয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সদস্য শাজাহানের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে শুধাংশু বাবুর ছেলে স্নেহাশীষ।
শাজাহানই উদ্যোগী হয়ে সামসুলের সাথে যোগাযোগ করে। সাজাহানের বাইকে চেপে সামসুল হাজির হয় উলুবেড়িয়া ব্লাড ব্যাঙ্কে। সেখানে প্রয়োজনীয় আবেদনপত্র পূরণের পর রোজা ভেঙে রক্তদান করে সামসুল। রক্ত দেওয়ার পর শামসুল জানান, “ওনাদের রক্তের খুব প্রয়োজন ছিল। প্রথমে একটু দ্বিধাগ্রস্থ ছিলাম। পরে পরিস্থিতি বুঝে রোজা ভেঙে রক্তদানের সিদ্ধান্ত নিই। মানুষ হয়ে মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়াবোনা তা কীকরে হয়!” শুধাংশু বাবুর ছেলে স্নেহাশীষ চক্রবর্তীর কথায়, “করোনা আবহে যখন আমার পরিচিতরা প্রায় সবাই অজুহাত দেখিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিল, যখন আমি প্রায় নিরুপায়, তখন এনারাই আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন রক্ত দিলো। আমি অভিভূত। আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।” শামসুল, শাজাহানদের এই উদ্যোগ আবারও সমাজের দ্বারে রেখে গেল শাশ্বত বার্তা – “সবার উপর মানুষ সত্য…”।