নিজস্ব প্রতিবেদন : জেলা হিসাবে খুব বড়ো না হলেও কোলকাতা ভারতের প্রাক্তন রাজধানী ও বাংলার বর্তমান রাজধানী। এই মহানগরীর বুকেই লুকিয়ে রয়েছে কতশত অজানা ইতিহাস, তিলোত্তমার অন্দরে কান পাতলে আজও শোনা যায় অজস্র অজানা কাহিনী। কালের নিয়মে পুরানো অট্টালিকা ভেঙে গড়ে উঠেছে গগনচুম্বী শত শত বিল্ডিং। কিন্তু, কোলকাতারই বুকে আজও ছড়িয়ে রয়েছে অনেক অজানা ইতিহাস। কোনোটা উপেক্ষিত, আবারও কোনোটা অবহেলিত। সেরকমই কিছু ইতিহাসের কাহিনীকে নবপ্রজন্মের কাছে তুলে ধরছে ‘পুরনো কোলকাতার গল্প’ নামক একটি জনপ্রিয় ফেসবুক গ্রুপ। বিভিন্ন ঐতিহাসিক তথ্যকে তুলে ধরার পাশাপাশি কোলকাতার বুকে রানী রাসমণির তৈরি হেরিটেজ বিল্ডিং রক্ষণাবেক্ষণের দাবিতে সরব হয়েছে ফেসবুক গ্রুপটির বেশ কিছু সক্রিয় সদস্য। কোলকাতার ইতিহাস ঘাঁটতে গিয়ে জানা যায়, মৃত্যুপথযাত্রীকে গঙ্গার ঘাটে রেখে চলে যাওয়ার বিশেষ রীতি ছিল। সে-ই মৃত্যুপথযাত্রীদের জন্যই বিশাল বাড়ি তৈরি করে দিয়েছিলেন রাণী রাসমণি। সে-ই বাড়ি আজ গ্রেড-১ হেরিটেজ বিল্ডিং। কিন্তু,রক্ষণাবেক্ষণ তো দূরের কথা; সেই বাড়িই আজ বিলুপ্তির পথে। তাকে বাঁচাতে উদ্যোগী হয়েছে সংশ্লিষ্ট ফেসবুক গ্রুপ।
ফেসবুক গ্রুপটি সূত্রে জানা গেছে, রানী রাসমণির স্বামী শ্রী রাজ চন্দ্র দাসের দ্বারা নির্মিত অন্তর্জলিভবনটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অত্যন্ত খারাপ অবস্থার সম্মুখীন। তাই বহু ইতিহাসের সাক্ষ্যবহনকারী এই বাড়িটিকে বাঁচাতে মুভমেন্টে নামছে ‘পুরনো কোলকাতার গল্প’ নামক ফেসবুক গ্রুপটি। জানা গেছে, এর আগেও ‘পুরনো কলকাতার গল্প’ গ্রুপের তরফে কোলকাতার বেশ কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী ভবনকে অবলুপ্তির পথ থেকে বাঁচানো হয়েছে। এবারও তাঁরা লক্ষ্যে সফল হবেন বলে আশাবাদী গ্রুপের সদস্যরা। উদ্যোক্তাদের কথায়, ” কোলকাতা পুরসভার ২১ নং ওয়ার্ডের নিমতলা ঘাট সংলগ্ন অন্তর্জলি ভবন। রানী রাসমণির স্বামী রাজ চন্দ্র দাসের দ্বারা নির্মিত এই ভবনটির বয়স প্রায় ২০০ বছর। ২০১৫ সালে এই বাড়িটির ওপর প্রথম হামলা হয়। দুটি থামকে ভেঙ্গে ফেলা হয়। তাও এখনও কোনওরকমে অস্তিত্ব টিকিয়ে নীরবে দাঁড়িয়ে আছে কোলকাতার সামাজিক ইতিহাসের এক জীবন্ত দলিল। রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। এমন একটি ঐতিহাসিক স্থানে ফ্ল্যাট বাড়ি যেন না দেখতে হয় তা আমরা দায়িত্ব নেব।”
এর পাশাপাশি, ‘পুরনো কলকাতার গল্প’ গ্রুপের সক্রিয় সদস্যরা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কেএমসি’র গ্রেড ১ হেরিটেজ তকমা নিয়ে? তাঁদের প্রশ্ন,”যদি আমরা এই ঐতিহ্য গুলির কোনো সম্মান না দিতে পারি তাহলে গ্রেড করা হয়েছিল কেন? নদীর ধারের অংশ কোলকাতা পোর্ট কমিশনের বলে জানা যায়। কিন্তু অদ্ভুতভাবে শোনা যাচ্ছে যে এই ভবনটি বিক্রি হয়ে গেছে। কে বা কারা বিক্রি করলেন আর কে বা কারা কিনলেন, তার বিষয়ে জানা মুশকিল।”ইতিহাস সচেতন এই গ্রুপের সদস্যদের কথায়, “এই ইতিহাসকে মুছে দিতে দেওয়া যায় না। সমস্ত মিডিয়া সরব হোক। আমরা মনে করি রানী রাসমনীর সিরিয়ালের টিআরপি বাড়ানোর থেকে এটি বেশী গুরুত্বপূর্ণ।’ ইতিহাসের পাতা উল্টে জানা যায়, ৬৭/১৯ স্ট্র্যান্ড রোডের সংলগ্ন বাড়ি। তখন মৃতপ্রায় মানুষদের নিয়ে আসা হত গঙ্গাতীরে। তাদের গঙ্গাপ্রাপ্তি না ঘটা পর্যন্ত তাঁকে এবং তাঁর বাড়ির লোকজনদের অপেক্ষা করতে হত গঙ্গাতীরে। মাথার ওপর অস্থায়ী ছাউনি টাঙিয়ে। যাকে বলা হয় ‘অন্তর্জলিযাত্রা’। রানী রাসমনি এইসমস্ত মানুষদের কথা ভেবে একটি পাকা দালান নির্মান করে দিয়েছিলেন। অন্তর্জলীভবন বা ‘Moribund House’ — এই সৌধটিরই আজ করুণ অবস্থা বলে জানা যায়।