নিজস্ব সংবাদদাতা : পথ চলতে বহু জায়গায় চোখে পড়ে বিভিন্ন মনীষীদের আবক্ষ মূর্তি। অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলোর মান এতটাই খারাপ হয় যে, নীচে নাম লেখা না থাকলে বোঝা দায় যে মুর্তিটি কোন মনীষীর। শ্যামপুরের ষাটোর্ধ মহিলা সন্ধ্যা বাগের হাতে তৈরি মুর্তি অবশ্যই তার ব্যাতিক্রম। জীবনে কখনো কোথাও প্রশিক্ষণ না নিয়েও সিমেন্ট দিয়ে নিজের খেয়ালে গড়ে তোলেন একের পর এক মনীষীদের অবয়ব। শ্যামপুর দুই নং ব্লকের সুলতানপুরে সন্ধ্যা বাগের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল দুই কামরার জরাজীর্ণ বাড়ি।
বাড়ির গেটে ও দেওয়ালে আঁকা বিভিন্ন ধরনের ছবি। ঘরের মধ্যে সাজানো রয়েছে শ্রী রামকৃষ্ণ দেব, রবীন্দ্রনাথ, নেতাজী, বিবেকানন্দ সহ বিভিন্ন মনীষী ও বিখ্যাত ব্যক্তিদের আবক্ষ মূর্তি। শারীরিক অসুস্থতার জন্য এখন মুর্তি তৈরি করতে পারেন না সন্ধা দেবী। তার পরিবর্তে দারিদ্রতার কারণে আধপেটা খেয়ে মনের খেয়ালে এঁকে চলেছেন শয়ে শয়ে ছবি। সন্ধ্যা বাগ জানালেন ছোট বেলা থেকেই ছবি আঁকা আর মুর্তি গড়ার প্রবল সখ ছিল। কোথাও কোনো মূর্তি দেখলে, যতক্ষণ না সেটা নিজে বানাতে পারছি, ছটপট করতাম। বাড়িতে এসে সেটা বানিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতাম।
পাছে এই কাজ বন্ধ হয়ে যায়, সেই কারণে বিয়েও করেননি তিনি। বাবা,মা মারা যাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন মন্দিরে বা কোন সংস্থার জন্য মুর্তি গড়ে দুবেলার খাবার জোগাড় করতেন তিনি। কোনোভাবে চলে যাচ্ছিল একার সংসার। কিন্তু কয়েক বছর আগে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। বন্ধ হয়ে যায় মুর্তি গড়া। সন্ধা দেবী বলেন সংসার খরচ চালিয়ে মুর্তি গড়ার টাকা থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়ে রেখেছিলাম বাড়ি তৈরি করবো বলে। চিকিৎসা ও সংসার চালাতে গিয়ে সেই টাকা প্রায় শেষ। জানিনা এরপর কি করবো? সরকারী কোন সাহায্য তিনি পাননি বলেও জানান।
তিনি বলেন মুর্তি গড়া আমার নেশা। আবারো সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠে মুর্তি গড়তে চান তিনি। শামপুরের বাসিন্দা অয়ন বর বলেন কয়েকদিন আগেই ওনার সম্পর্কে জানতে পারি। সত্যিই অবাক করার মতো প্রতিভা। শারীরিক ও অর্থনৈতিক ভাবে উনি খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছেন। আমরা চেষ্টা করছি সাধ্যমত ওনার পাশে থাকার এবং সবাইকে ওনার পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করছি। শ্যামপুর দুই নং ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জুলফিকার আলী মোল্লা বলেন ওনার বিষয়টি আমাদের জানা ছিলনা। পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে ওনাকে সবরকম সহযোগিতা করা হবে। সন্ধা দেবীর আশা আবারো সুস্থ হয়ে মুর্তি গড়ার কাজ শুরু করবেন তিনি। যাতে করে মেটে পেটের পাশাপাশি তার মনের ক্ষিদেও।