নিজস্ব প্রতিনিধি : বাংলার অন্যতম সম্ভ্রান্ত পরিবার হলেও প্রতিমা পূজা বন্ধ থাকায় ঠাকুরবাড়িতে ‘জন্মতিথি’ পূজার প্রচলন ছিলনা। বাড়িতে জন্মতিথি পূজার প্রচলন না থাকায় কে যে কবে জন্মেছে তার হিসেব কেউ রাখত না। পরিবারের ছেলেমেয়ের জন্মতারিখ কুষ্ঠিতেই তোলা থাকত। তাই শৈশবে রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন পালন কখনোই ঠাকুরবাড়ির অন্দরে হয়নি। দীর্ঘ প্রচলিত এই গতানুগতিক ধারার অবসান ঘটল বিলেত ফেরত জ্ঞানদানন্দিনীর হাত ধরে।
বিলতে থেকে ফিরে ঠাকুরবাড়ির অন্দরকে পরিচিতি ঘটালেন বিলেতি আদপকায়দার জন্মদিন পালনের সাথে। জ্ঞানদানন্দিনী দেবী তাঁর সন্তানদের জন্মদিনে বাড়িশুদ্ধ সকলকে বৈকালিক জলযোগে আমন্ত্রণ জানাতেন। বিলেতে ধর্মপ্রাণ মেমেরা যেমন পাদরীকে দিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানের সূচনা ঘটাতেন, ঠিক তেমন ভাবেই ব্রাহ্মেরাও আচার্যদের প্রথমে উপাসনা করিয়ে শেষে আহার ও উপহারের বন্দোবস্ত করতেন।
জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর দেখানো পথেই ঠাকুরবাড়িতে ১২৯৪ বঙ্গাব্দের ২৫ শে বৈশাখ (ইং- ৭ ই মে, ১৮৮৭) শুরু হল সকলের প্রিয় রবির জন্মদিন পালন অনুষ্ঠান। কবিগুরুর বয়স যখন ২৭,সেই প্রথম তাঁর জন্মদিন পালিত হল তাঁর ন’দিদি স্বর্ণকুমারী দেবীর মেজোমেয়ে সরলাদেবীর উদ্যোগে। প্রিয় নতুন বৌঠানের আত্মহত্যার ৩ বছর পর জীবনে প্রথমবারের জন্য কবির জন্মদিন পালিত হল। সেই শুরু ২৫ শে বৈশাখ পালন। আজও দেশ – বিদেশের অগণিত মানুষ সাড়ম্বরে পালন করেন প্রাণের কবি রবি ঠাকুরের জন্মতিথি।
রবীন্দ্রনাথের প্রথম জন্মদিন পালন প্রসঙ্গে তাঁর ভাগ্নী সরলাদেবী লিখেছেন: “…রবিমামার প্রথম জন্মদিন উত্সব আমি করাই। …অতি ভোরে উল্টাডিঙির কাশিয়াবাগান বাড়ি থেকে পার্ক স্ট্রীটে নিঃশব্দে তাঁর ঘরে তাঁর বিছানার কাছে গিয়ে বাড়ির বকুল ফুলের নিজের হাতে গাঁথা মালা ও বাজার থেকে আনান বেলফুলের মালার সঙ্গে অন্যান্য ফুল ও একজোড়া ধূতি – চাদর তাঁর পায়ের কাছে রেখে প্রণাম করে তাঁকে জাগিয়ে দিলুম। তখন আর সবাই জেগে উঠলেন – পাশেই নতুন মামার ঘর। “রবির জন্মদিন” বলে একটি সাড়া পড়ে গেল। সেই বছর থেকে পরিজনদের মধ্যে তাঁর জন্মদিনের উত্সব আরম্ভ হল।”