নিজস্ব সংবাদদাতা : কোথাও অসুস্থ হয়ে পড়ে রয়েছে হনুমান বা কুকুর, আবার কোনো গৃহস্থের বাড়িতে ঢুকেছে সাপ। রাত কিংবা দিন, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা — এ খবর আসা মাত্রই ছুটে চলে রামু। সযত্নে প্রাণীগুলোকে উদ্ধার করে তার সেবাশুশ্রূষা করার পর স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়া বা বন দপ্তরের হাতে তুলে দেওয়ার কাজটাও সে করে। এভাবেই দীর্ঘকাল ধরে জীবসেবা করে চলেছেন হাওড়ার ডোমজুড়ের মাকড়দহ এলাকার যুবক রামচন্দ্র বাগ। রামু নামেই তাকে সকলে একডাকে চেনে। পশুপাখির বন্ধু হিসাবে পরিচিত রামুর শৈশবে পশুপাখির প্রতি যে টান গড়ে উঠেছিল তা কালক্রমে বেড়েই চলেছে। বাড়িতে আহত কুকুর, হনুমান, এমনকি আহত বিষধর সাপকে উদ্ধার করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সেবা-সুশ্রূষা করে সুস্থ করে রামু। বাড়িতে বিভিন্ন সময় নতুন অতিথি — কুকুর, বিড়াল, সাপের মতো বিভিন্ন আহত পশুপাখি আর রামু এবং তার বৃদ্ধা মা। রামচন্দ্র বাগের কথায়, জীবসেবাই তার ধ্যানজ্ঞান। বিস্তারিত জানতে নীচে পড়ুন...
এভাবেই সে আজীবন জীবের সেবা করে যেতে চায়। রামুর মা জয়ন্তী বাগ জানান, তার একমাত্র ছেলে রামচন্দ্র বাগ। সাপ উদ্ধার করতে গিয়ে একাধিকবার সাপের কামড় খেয়ে হাসপাতালে পর্যন্ত ভর্তি করতে হয়েছে রামুকে। তবুও ছোটবেলা থেকে রামুর নেশা আহত জীবজন্তু দেখলেই তাকে উদ্ধার করে নিয়ে সেবা শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তোলা। সেই নেশা মাথায় দিন দিন আরো বেশি করে চেপে বসছে। অভাবের সংসার তাতেও বাধা পড়েনি জীবের প্রতি ভালোবাসায়। তার মা জানায়, বৃদ্ধ বয়সে বিভিন্ন রোগ চেপে বসেছে। অর্থাভাবে সেই রোগের চিকিৎসা করাতে পারছে না। তিনি প্রতিদিন রান্না করে দেন, সেই খাবার রামু যত্ন করে খাওয়ায় পশু পাখিদের। পশু পাখির সেবা সুশ্রূষা করেই কাটিয়ে দেয় সারাদিন, অন্য কোনো কাজে রামুর মনও সেভাবে বসে না। রামুর মা জানান, কয়েক বছর আগে বন বিভাগ কাজের সুযোগ এসেছিল। আশা ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে কাজটাও পেলনা। কাজটা হলে অন্তত অভাবটা ঘুচত। একথা বলতে বলতে তার দু-চোখ জলে ভিজে আসছিল। তার আক্ষেপ,”ছেলের কেউ একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিল না!”