নিজস্ব সংবাদদাতা: উলুবেড়িয়া- সাঁঝের বেলা ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ। পুকুরে লালশালুকের ঝাঁক। রাজহাঁসের দল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। উন্মুক্ত মাঠে মুরগির দল খুঁটে খাচ্ছে খাচ্ছে তাদের খাবার। গোয়ালে রয়েছে গরু। গ্রামের এই চেহারা আজ প্রায় অবলুপ্তির পথে। নগরায়নের ফলে গ্রামের এই চেহারা ক্রমশঃ হারিয়ে যাচ্ছে।
সেই পুরনো গ্রামবাংলার চেহারা নিয়ে গ্রামের ভেতর গড়ে তোলা হয়েছে আস্ত একটি গ্রাম। সেই গ্রাম দেখতে গেলে আপনাকে হাজির হতে হবে হাওড়া জেলার প্রায় শেষ প্রান্ত শ্যামপুর থানার ধান্দালি গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ণেন্দু শিল্প গ্রামে। প্রায় আট বিঘা জায়গার ওপর এই ধরনের গ্রাম তৈরি করেছেন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী ও প্রয়াত চিত্রপরিচালক পূর্নেন্দু পত্রির কাছের মানুষ রনজিৎ রাউত। তার শিল্পী হওয়ার পেছনে পূর্নেন্দু পত্রির আশীর্বাদ ও সহযোগিতার কারণে শিল্পি রনজিৎ রাউত এই গ্রামের নামকরন করেছেন ‘পুর্নেন্দু ‘ শিল্পগ্রাম’।
নানারকম শিল্পকর্ম দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে এই গ্রাম। গাছের শিকড় বাকড় দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে নানাশিল্পকর্ম, রয়েছে পূর্নেন্দু পত্রির হাতে আঁকা ষোলটি ছবি। এছাড়াও পুকুরে লালশালুকের পাশাপাশি ঘুরে বেড়াচ্ছে রাজহাঁসের দল। রয়েছে তেজপাতা,সবেদা,আম,জাম,নারকেল,সুপারি,বট সহ বহু প্রজাতির গাছ। আসামের দুলিয়াজান এলাকার মানুষেরা ইচ্ছাপূরনে ঘন্টা বেঁধে রাখেন বট গাছের ঝুড়িতে। তার অনুকরণে তৈরি করা হয়েছে ইচ্ছাপূরণ ঘন্টাবৃক্ষ। রয়েছে মুক্তমঞ্চ। যেখানে অনাহাসেই পাঁচ সাতশো মানুষকে নিয়ে করা যেতে পারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সবকিছুরই নামকরন করা হয়েছে পূর্নেন্দু পত্রির নামকরননুসারে।
এই শিল্পগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা রনজিৎ রাউৎ বলেন,হাওড়া জেলায় নাকোল গ্রামে জন্ম বিশিষ্ট চিত্রপরিচালক পূর্নেন্দু পত্রির। তার প্রয়ানের পরেও তার মূল্যায়ন তেমনভাবে হয়নি। তাই তার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য এবং তাকে স্মরণ করার জন্য এই গ্রামের সৃষ্টি করা হয়েছে।
প্রয়াত চিত্রপরিচালক পূর্নেন্দু পত্রির পরিচালনায় চলচ্চিত্র ‘স্ত্রীর পত্রের’ নায়িকা মাধবী মুখোপাধ্যায় ২০১০ সালে এই পূর্নেন্দু শিল্পগ্রামের উদ্বোধন করেছিলেন। একদিকে গ্রামের চেহারা, অন্যদিকে শিল্পের সমন্বয় দুই এর মেলবন্ধনের এই নিদর্শন দেখতে পর্যটক থেকে শিল্প গবেষক সহ বহু মানুষ ভীড় জমান এই গ্রামে।