নিজস্ব সংবাদদাতা : সব অভিমান সরিয়ে রেখে পুরানো তৃণমূল কর্মীরা দলের সঙ্গে থাকার আশ্বাস দিলেন স্থানীয় তৃনমূল নেতৃত্বকে। রবিবার উলুবেড়িয়া পুরসভার অতিথিশালায় অনুষ্ঠিত হয় তৃনমূলের ঘোষিত কর্মসূচি বাংলার গর্ব মমতার একটি অংশ স্বীকৃতি সম্মেলন। সেখানে তারা প্রায় প্রত্যেকেই দলের তৃণমূল স্তরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। উলুবেড়িয়ার নেতৃত্বরা তাদের অভিযোগ শোনেন। নেতৃত্বরা সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। তারপর পুরানো ১৪ জন নেতা কর্মীরা দলের সাথে থাকার আশ্বাস দিলেন। প্রসঙ্গত গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের খারাপ ফল হয়। দলের তদন্তে উঠে আসে দলের অর্ন্তদ্বন্দ্ব ও পুরানো কর্মীদের নিস্ক্রীয় হয়ে যাওয়ার বিষয়টি। তা দূর করতে প্রশান্ত কিশোর তৃণমূলকে বিভিন্ন কর্মসূচির পরামর্শ দেন। সেই অনুযায়ী স্বীকৃতি সম্মেলনের আয়োজন করে তৃণমূল। উপস্থিত ছিলেন ১১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন সভাপতি মুক্তি অধিকারী, ১ নম্বর প্রাক্তন সভাপতি ফিরোজা বিবি, ১৪ নম্বর অন্য ওয়ার্ড প্রাক্তন সভাপতি আক্রাম খান। এই স্বীকৃতি সম্মেলনে ফুল দিয়ে উত্তরীয় পরিয়ে, মাস্ক পরিয়ে তাদের সম্মান জানানো হয় দলের তরফে। অন্যন্যদেরও সম্মানিত করা হয়। তারা দলের পুরানো কর্মী হওয়া সত্ত্বেও প্রায় পাঁচ বছর নিস্ক্রীয় হয়ে বসেছিলেন।
মুক্তিবাবুর অভিযোগ যে তিনি নিঃস্বার্থভাবে ১৯৯৮ সাল থেকে তৃণমূল করেছেন। দলের জন্য শ্রম, অর্থ ব্যায় করেছেন। কিন্তু বিগত পাঁচ বছর ধরে দলে কোনো সম্মান পাচ্ছিলেন না। উলুবেড়িয়া পুরসভার ২০১৫ সালের নির্বাচনে তাকে টিকিট না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হন ও মুক্তিবাবু নির্দল প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। তার পর থেকে তিনি দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তিনি বলেন, আমরা দলের একনিষ্ঠ কর্মী হওয়া সত্ত্বেও দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ আমাদের কাছে ডাকেনি। উল্টে দলের কর্মীরা সিপিএমের থেকেও খারাপ ব্যবহার করেছেন আমাদের সঙ্গে। এটা নিয়ে আমার ক্ষোভ রয়েছে। এব্যাপারে উলুবেড়িয়া পূর্ব কেন্দ্রের বিধায়ক ইদ্রিস আলি ও পুরসভার চেয়ারম্যান অভয় দাস তাকে বলেন, ভুল বোঝাবুঝি দূর করুন। খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপনাদের সম্মান জানাচ্ছেন এই স্বীকৃতি সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়ে। ইদ্রিসবাবুরা তাদের আহ্বান জানান দলের জন্য আবার সক্রিয় হতে। প্রয়োজনে দলের হয়ে আমরা আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইবো। মুক্তিবাবুও তাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে দলের সঙ্গে থাকবেন বলে আশ্বাস দেন। ফিরোজা বিবি বলেন, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের ব্যবহারে বহু মানুষ ক্ষুব্ধ। তাছাড়া কাজেও অনেক ঘাটতি রয়েছে। প্রসঙ্গত ১ নম্বর ওয়ার্ডে ফিরোজাকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন কংগ্রেসের সালেহা বেগম। পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। কাউন্সিলর আক্রাম খানও বলেন, বিগত সময়ে আমরা দলের হয়ে লড়েছি। নির্বাচনে খেটেছি। কিন্তু ২০১৫ সালের পর থেকে কাউন্সিলরের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে। পরে আমরা বসে যায়।
একই অভিযোগ করেন বিভিন্ন ওয়ার্ডের নিস্ক্রীয় তৃণমূল কর্মীরা। ১১ নম্বর ওয়ার্ডের রঞ্জিত সমাদ্দার, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের মুক্তার আলি হালদার, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ওবাইদুল্লা সেখ সহ অন্যান্য প্রাক্তন নেতা কর্মীরা। বিক্ষুব্ধরা সকলেই প্রশ্ন তুলেছেন নিচু স্তরের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে। তবে সকলেই একযোগে প্রশংসা করেছেন তৃণমূলের সময়ে হওয়া রাস্তাঘাট, জলের সমস্যা সমাধান সহ নানান উন্নয়নের বিষয়ে। এদিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উলুবেড়িয়া পূর্ব কেন্দ্রের সভাপতি বেনুকুমার সেন, উলুবেড়িয়া পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান আব্বাস উদ্দিন খান, চেয়ারম্যান পারিষদ আকবর সেখ প্রমুখ।
এদিন হাওড়ার গ্রামীণ এলাকার বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্রেও এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আমতা বিধানসভা কেন্দ্রের তরফে ওই কেন্দ্রের সভাপতি সেলিমুল আলম, আমতা ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকান্ত পালরা ১২৮ জনকে আমন্ত্রণ জানান। তাদের সম্মান জানানো হয়। দেওয়া হয় গাছের চারা। উদয়নারায়ণপুরে ২০ জনকে সংবর্ধনা দেন বিধায়ক সমীর পাঁজা। শ্যামপুরের বিধায়ক কালীপদ মন্ডল, ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জুলফিকার আলি মোল্লারা জনা ৪০ পুরানো তৃণমূল নেতাকর্মীদের সম্মান জানান। বাগনান কেন্দ্রের বিধায়ক অরুণাভ সেন প্রায় ৩০০ জন পুরানো তৃণমূল নেতাকর্মীদের সম্মান জানান। এছাড়া উলুবেড়িয়া উত্তর ও দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে মন্ত্রী নির্মল মাজি ও বিধায়ক পুলক রায় দলীয় পুরানো নেতাকর্মীদের সম্মান জানান।