নিজস্ব সংবাদদাতা : সময়টা ১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারী। কীর্ণাহারের বছর বাইশের যুবকটি নিজের গ্রাম থেকে কয়েকশো মাইল দূরে হাওড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম তাজপুরের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাজপুর এম.এন রায় ইন্সটিটিউশানে সহ-শিক্ষক হিসাবে যোগ দিলেন। বেতন ১০৫ টাকা। এরই মধ্যে দেশজুড়ে দ্বিতীয় লোকসভা নির্বাচনের দামামা বেজে উঠল। বিদ্যুৎ তো দূরের কথা মাইলের পর মাইল হেঁটে গেলেও একটা রেডিও খুঁজে পাওয়াও সেইসময় একপ্রকার দুষ্প্রাপ্য ছিল।
কিন্তু, সদ্য শিক্ষকতায় প্রবেশ করা বীরভূমের ভূমিপুত্রের তখনও রাজনীতিতে হাতেখড়ি না হলেও রাজনীতির প্রতি একটা আকর্ষণ ছিলই। আর সেইসময় দ্বিতীয় নির্বাচনে দেশে কে জয়লাভ করে তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই কৌতুহল ছিল। তা-ই হয়ত তাজপুর থেকে নৌকায় দামোদর নদী পেরিয়ে উদংয়ের বড়োবাঁধ ধরে প্রায় ৬-৭ কিমি পায়ে হেঁটে আমতা বন্দরের কাছে প্রাচীন বাংলোয় (বর্তমানে সেচ দপ্তরের অফিস) রেডিও শুনতে যেতেন ‘মাস্টারমশাই’।
দ্বিতীয় লোকসভা নির্বাচনের উল্লেখ্য, সেই নির্বাচনের ফলাফল বেশ কয়েকদিন ধরেই প্রকাশিত হত। এর পাশাপাশি, মাস্টারমশাই প্রায়শই পায়ে হেঁটে তাজপুর থেকে আমতা আসতেন কেবল বই পড়ার তাগিদে। আমতা লাইব্রেরীতে বই পড়তেন। পড়া শেষ হলে আবার তাজপুর গ্রামে ফিরে যেতেন। এভাবেই দেখতে দেখতে কেটে ৬ টা মাস। তাজপুরকে বিদায় জানিয়ে মাস্টারমশাই চললেন আগামীর পথে। মাঝে কেটে গেছে অনেকগুলি বছর। নিজ গুণ ও দক্ষতাকে পাথেয় করে দেশের শীর্ষ নাগরিক হয়ে উঠেছেন। হয়ে উঠেছেন আপামর বাঙালি তথা ভারতবাসীর প্রণব মুখোপাধ্যায়।
কিন্তু, তাজপুরের আপনজন হয়েই রয়ে গেছেন দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাজপুরবাসী যেমন ভোলেনি তাদের মাস্টারমশাইকে, তেমন প্রণব বাবুর স্মৃতি থেকেও বিন্দুমাত্র মুছে যায়নি হাওড়ার এই প্রত্যন্ত গ্রামের সেদিনের মুহুর্তগুলি। তাইতো শত ব্যস্ততার মাঝেও ১৯৯৫ ও ২০১৭ সালে তাজপুর এম.এন রায় ইন্সটিটিউশানের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকেছেন। নবপ্রজন্মকে শুনিয়েছেন সেদিনের স্মৃতিগুলি। নিজের বক্তব্যের মাধ্যমে ছাত্র-যুবকে অনুপ্রাণিত করেছেন। এমনকি তাঁর স্নেহভাজন বেশ কয়েকজন প্রাক্তন পড়ুয়ার খোঁজ নিতেও ভোলেননি দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি।