নিজস্ব প্রতিবেদক : “ডান হাতে তোর খড়গ জ্বলে,বাঁ হাত করে শঙ্কাহরণ,দুই নয়নে স্নেহের হাসি,ললাটনেত্র আগুনবরন! ওগো মা, তোমার কি মূর্তি আজি দেখি রে!” —বিশ্বকবি বঙ্গমাতার এক অপরূপ মূর্তি কল্পনা করেছিলেন। সাহসী বঙ্গ জননী লড়াইয়ের বার্তা দিচ্ছেন। এও এক লড়াইয়ের গল্প। তবে প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এ লড়াই বিশ্বজনীন। এ লড়াই করোনার বিরুদ্ধে। এমন লড়াইয়ের প্রভাব পড়েছে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবেও। উৎসবেও পরিবর্তনের রঙ। আর তাতেই বদলে গিয়েছে মাতৃমূর্তি।দেবী দুর্গার মুখে মাস্ক!
কবির স্বদেশী পর্যায়ের ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ কবিতার ‘ওগো মা, তোমার কি মূর্তি আজি দেখি রে’ —লাইনের সঙ্গে মিলেই যাবে আপনার অভিব্যক্তি।মা’দুর্গার মুখে মাস্ক! কোনওদিন ভেবেছিল বাঙালী? —কিন্তু সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এসব হচ্ছে। মায়ের এমন মাস্ক ভরা মুখ দেখলে যে কোনও ভক্তের বেরিয়ে আসতেই পারে —’তোমার কি মূর্তি আজি দেখি রে’ লাইনটি। এমন কর্মকাণ্ডের সৌজন্যে গৌরীবাড়ি সর্বজনীন দুর্গোৎসব। উদ্দেশ্য সমাজের বিভিন্ন অংশে মাস্ক পড়ার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া। উদ্যোক্তাদের কথায়, “দেবী যদি মাস্কে তাঁর রূপ ঢাকতে পারেন আপনি কেন পারবেন না? আপনিও মাস্ক পরুন, অপরকে মাস্ক পড়ার কথা বলুন।” সমাজের দ্বারে এই বার্তা দেওয়ার জন্য ৪১.৮ গ্রামের একটি রুপোর মাস্কও বানিয়ে ফেলেছেন তাঁরা। মাস্ক পরা দুর্গা প্রতিমার মুখ সামনে রেখেই খুঁটিপুজো হয়েছে তাঁদের। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা মান্টা মিশ্র বলেন, “এবার আমাদের ৮৭তম বছর। এই মুহূর্তে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক।
কিন্তু অনেকেই এখনও এবিষয়ে উদাসীন। দেবীর মুখে মাস্ক দেখে যদি তাঁদের হুঁশ হয়!! তবে এ বিষয়ে গত ১৪ ই আগস্ট সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ায় তড়িঘড়ি মাস্ক বানিয়ে দেওয়ার জন্য কলকাতার কোনও স্বর্ণকারকেই পাওয়া যায়নি। অবশেষে বেলঘরিয়ার এক স্বর্ণকার রুপোর মাস্কটি বানান। মান্টাবাবুর দাবি, “একটি মুকুট থেকে রুপোর মাস্কটি তৈরি করানো হয়েছে। মুকুট তো আদতে একটি রক্ষাকবচ। আমরা মনে করছি, মুকুট নয়, মাস্কই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় রক্ষাকবচ।” সোনার দুর্গা, হীরের মুকুট, রূপোর মণ্ডপ অনেক কিছুই দুর্গা পুজোয় দেখেছে এই শহর। দশ হাতে সোনার অস্ত্র। সঙ্গে সোনার চোখ, মুকুট, নথ, গয়না। সব মিলিয়ে প্রতিমার জন্য অন্তত খান পঞ্চাশেক গহনা থাকে প্রায় সব পুজো কমিটিরই। করোনা আবহে এবার ‘নিউ নর্মাল’-এর অঙ্গ হিসেবে তাঁদের মণ্ডপের দুর্গা মূর্তি কি মাস্ক পরিহিত হবে? —সেই দিকেই তাকিয়ে উৎসব প্রিয় বাঙালি।