নিজস্ব সংবাদদাতা : লোকগানের মধ্যদিয়েই পালিত হল জিতাষ্টমী। আর তার মধ্য দিয়েই উমার আগমনী বার্তা ভেসে উঠল বাংলা তথা বাঙালির দ্বারে। লোককথা সেই কথাই জানাচ্ছে। দু-দিন আগেই বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন জায়গায় সাড়ম্বরে পালিত হল জিতাষ্টমী ব্রত।
উল্লেখ্য, জিতাষ্টমী ব্রত বাংলার হিন্দুসমাজের ব্রতগুলির অন্তর্গত একটি সধবা ব্রত। গ্রাম বাংলার বাঙালি হিন্দুঘরের মহিলারা সন্তানের আয়ুবৃদ্ধি ও মঙ্গলকামনায় এই ব্রত পালন করেন। এটি আশ্বিন মাসের কৃষ্ণাষ্টমী তিথিতে পালন করা হয়। এই ব্রত লোকভাষায় ‘জিতা’, ‘জিতীয়া’ বা ‘বড়ষষ্ঠী’ নামেও পরিচিত। জিতাষ্টমীতে গৃহের উঠোনে বটগাছের ডাল, ধান, আখ প্রভৃতি গাছকে পূজা করা হয় জীমূতবাহনের প্রতীকরূপে। গলায় দেওয়া হয় শালুক ফুলের মালা। এ আসলে ইন্দ্রের পূজা। এর পাশাপাশি শিয়াল-শকুনীর মূর্তি তৈরি করা হয়। বাংলার এক অসাধারণ লোক উৎসব এই ‘জিতাপরব’।
‘জিতার ডালায় বোধন আসে’ —অর্থাৎ জিতাষ্টমীর পরদিন কৃষ্ণানবমীতে দেবী দুর্গার প্রথম বোধন আরম্ভ হয়। দুর্গাপুজোর সূচনাও এইপরবের হাত ধরে। জিতাষ্টমী ব্রত পালনের প্রথম পর্যায়ে কৃষ্ণা সপ্তমীর দিন সন্ধ্যায় বাড়ীর উঠনে গর্ত করে ছোট জলাশয় তৈরি করে বা যে কোনো পাত্রতে জল ভরে জলাশয় স্বরূপ তৈরি করে তাতে ছোলা মটর ভিজিয়ে, সাথে বেলগাছ, কলাগাছ ও ফলের বিভিন্ন নৈবেদ্য সাজিয়ে রাখতে হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে কৃষ্ণা অষ্টমীর দিন সন্ধ্যায় সন্তান সন্ততির মঙ্গল কামনায় ওই জলাশয়ের সাথে বেলগাছ, কলাগাছ প্রভৃতি পুঁতে পূজা করতে হয়। তৃতীয় পর্যায়ে ওই জলাশয় ভেঙে ছোলা মটর ও ফল প্রসাদ গ্রহণ ও বিতরণ করতে হয়। জিতাষ্টমীর পরদিন কৃষ্ণানবমীতে স্থানবিশেষে শারদীয়া দুর্গাপূজার প্রথম বোধন ও প্রথম কল্পারম্ভ হয়ে থাকে। সাধারণত এই জিতাষ্টমীর থেকে ঠিক পনেরো দিন পর শ্রী দুর্গাষ্টমী হয়। এবার মল মাস পড়ে যাওয়ায় সেটির ৪৫ দিন ব্যবধান হয়েছে।