– রাধামাধব মণ্ডল
বড়ো অন্ধকার সময়! আলোও রয়েছে দূরে দাঁড়িয়ে! ক্রমশ অন্ধকার ঘিরে ফেলছে আমাদের! দূরে দাঁড়ানো আলো, কখন কাছে এসে আমাদের পাশে দাঁড়াবে, কেউ জানি না! মনের মধ্যে একটি ঝড় তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে একটানা! সমবেত উদ্যোগেই একদিন ঝড় কাটলে, আমরা যেন আশ্রয়হীন মাঠে না দাঁড়ায় ; তার উদ্যোগ নিতে হবে এখুনি! সেই উদ্যোগেই বাঁচবে আগামী! এই সময়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গুলোর অন্যতম হলো স্বাস্থ্য! গণস্বাস্থ্যকে বাঁচাতে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি!
বিনা নজরে পড়ে রয়েছে বাংলার সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র গুলো, গ্রামে গ্রামে! সে গুলোর উপর কোনো নজরদারি নেই, নেই চাঙ্গা করার মতো বিকল্প কোনো উদ্যোগও! বাংলা জুড়ে গ্রামের চিকিৎসা ব্যবস্থায় এবার সঙ্কট শুরু হয়েছে! করোনা কালে ও তার পরবর্তী সময়ে বাংলার মানুষ এর জন্য ভুগবে! বামফ্রন্ট সরকারের মাঝখানের সময়েই আচমকা পঞ্চায়েত এলাকায় একটা করে গড়ে তোলা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলো এখন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে ছিল ১০ টি করে বেড পরিসেবা, সঙ্গে সঙ্গে চলতো সর্বক্ষণের জরুরি পরিসেবাও। গ্রামীণ বাংলায় বর্ষাকালে সাপের কামড়ের ভ্যাকসিন, কুকুরের কামড়ের ভ্যাকসিন ছাড়াও নানা রোগের প্রাথমিক চিকিৎসায়, এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ২৪ ঘণ্টার পরিসেবা ছিল বাংলার নিরন্ন মানুষের কাছে বেঁচে থাকার আশ্রয়। আজ সেই আশ্রয় সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে! ২৪ ঘণ্টা দূরে থাক, বেশির ভাগ প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রেই আর খোলা হয় না! দখল হয়ে যাচ্ছে সরকারি সেই সব প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জমি! নেই নার্স, নেই ডাক্তার! কোথাও কোথাও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভগ্ন ঘরে চলছে জুয়া, নেশার আড্ডা! পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট, বীরভূমের পাঁড়ুই থানা এলাকার এমন কিছু প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের গায়ে লেগেছে, সন্ত্রাসের আঁতুড় ঘরের তকমা! এই কঠিন সময়ে সেই সব স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলি স্বচল থাকলে, বদলে যেতে গ্রামীণ বাংলার চিকিৎসা ব্যবস্থার চিত্রটাই! করোনা কালে তারাও লাগতো সাধারণ চিকিৎসার কাজে!
এই প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাথার উপর প্রতি ব্লকে এখনও টিমটিম করে জ্বলছে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলো! কম বেশি এই ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এখনও চিকিৎসা পদ্ধতি জারি রয়েছে! তবে সেখানেও পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স, ফার্মাসিস্ট স্টাপ, এনএস নেই! তাই মাঝে মাঝেই অবহেলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ আসে সেই সব স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে। গ্রাম বাংলার কোনো ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেই, স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ! অথচ এই দুই ডাক্তারদেরই মেডিসিনের পর বেশি প্রয়োজনে লাগে মানুষের! বামফ্রন্টের ক্ষমতার মাঝামাঝি সময়ে থেকেই এক প্রকার সর্বক্ষণ খুলে রাখা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গুলো বন্ধ হয়ে গেছে, তেমনই ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোও পড়েছিল মুখ থুবড়ে! একপ্রকার পরিকাঠামো ছাড়ায় চিকিৎসা করতে হয় ডাক্তার বাবুদের। নেই পর্যাপ্ত ডাক্তার, রোগীর চাপ দিন দিন বাড়ছে। নেই পরিকাঠামো, নেই তেমন ঔষুধও!সবথেকে বড়ো বেশি বিপদজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এক শ্রেণির ডাক্তাররা এই সব ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রশাসনিক কর্তা বিএমওএইচ হয়ে এসে! তাদের দেখ ভালের জন্য কোনো কমিটি নেই। থাকলেও জেলা সিএম ওএইচ এই সব ডাক্তাদের উপর তেমন নজর দেয় না! ফলে বহু বিএমওএইচ মর্জিমাফিক ডিউটি করে! লক্ষ্যও রাখে না হাসপাতালের! সরকারি হাসপাতালের দায়িত্বে থাকলেও, সেই সময়ে তিনি প্রাইভেট প্যাক্টিস নিয়ে ব্যস্ত! সেই সব নানা কারণে এমনিতেই ধুঁকছে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গুলিও! অন্য দিকে এই সব কারণেই জেলা সদরের মহকুমা, কিংবা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গুলোতে দিন দিন বাড়ছে রোগীর চাপ! ফলে চিকিৎসা পরিসেবার মান গিয়ে ঠেকেছে তলানিতে! এই ধারার বদল আনা জরুরি!
এই কঠিন পরিস্থিতিকে সামলে, করোনা পরবর্তী ভারতবর্ষের মানচিত্রে অর্থনৈতিক গাড্ডায় ফেলা থেকে দেশকে বাঁচাতে পারে একমাত্র কৃষকরাই! স্থায়ী ফার্মা কালচারের দিকে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের। পতিত জমিতে সবুজ ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে কৃষকদের হাত ধরেই! সেই সঙ্গে সরকারি পতিত, খাস, অসমতল জমিকে, ধাপ সৃষ্টি করে, সরকারি সংরক্ষণ করা জমিতে, বনভূমিতে ফলমূলের পাশাপাশি দেশজ চাষবাসের সুযোগ তৈরিতে জোর দিতে হবে, সরকারি উদ্যোগে নামাতে হবে চাষিদের! এক একটি গ্রাম, বা শহরের দত্তক দিতে হবে এলাকা চিহ্নিত করে কৃষকদের হাতেই! তারাই সেই এলাকায় এলাকায় করবে খাদ্য সামগ্রীর সরবরাহ! তাহলেই খাদ্য সঙ্কট ঠেকাতে পারা সম্ভব হবে!
এবছর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও কৃষকের সামনে বড়ো বিপদ! বোর ধানের পাশাপাশি, মাঝে মাঝেই শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে আনাজপাতির! ঘনঘন স্বপ্নের মৃত্যু হচ্ছে কৃষকের ঘরে! শূন্য মাঠে থৈথৈ করছে অসময়ের জল! ফলে ঠিক সময়ে ফলছে না ফসল! করোনা পরিস্থিতির পাশাপাশি, এই লক ডাউনের কারণে কিছু কিছু জায়গায় নতুন করে খাদ্য সঙ্কটেও পড়বে মানুষ! সেই সঙ্কট ঠেকাতে এখুনি রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপে কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো উচিৎ। সময়ে বাংলার কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়া হোক শষ্য বীজ! ১০০ দিনের কাজের রূপায়ণ হোক, কৃষিক্ষেত্রে! অজয়, দামোদর, পদ্মা পাড়ের বহু কৃষি জমিতে দীর্ঘ দিন বন্যায় নদীর বালি পড়ে রয়েছে! নষ্ট হয়েছে কৃষি জমি! সরকারি পদক্ষেপ করে, ১০০ দিনের কাজে সেই সব জমিতে বালি তুলে ফেললে, সেই জমিতে নতুন করে সবুজ ফসল উৎপাদন করতে পারে কৃষকরা! এই মুহূর্তে গণস্বাস্থ্য ও স্থায়ী চাষবাসই বাঁচাতে পারে একমাত্র এই বিপন্ন বাংলাকে! এবং আমার দেশকে! সরকারি উদ্যোগে এই দুটি ক্ষেত্রে কিছু পরিকল্পিত পরিকল্পনার প্রয়োজন আছে! বাংলার ইতিহাসকে ধরে রাখতে, এখুনি আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ কৃষিতে ও গণচিকিৎসায়! তবেই একের বাংলা, দশের ভারত হয়ে উঠবে!