আম্ফানের তান্ডবে লন্ডভন্ড গ্রামীণ হাওড়া, ভেঙে পড়েছে অজস্র গাছ, কাঁচাবাড়ি, মৃত ৩

By নিজস্ব সংবাদদাতা

Published on:

নিজস্ব সংবাদদাতা : অতি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় আমফানের দানবীয় তান্ডবে বিধ্বস্ত সমগ্র গ্রামীণ হাওড়া। গ্রামীণ হকোড়ার বিভিন্ন ব্লকে ভেঙে পড়েছে কয়েক হাজার গাছ ও অজস্র কাঁচা বাড়ি। এখনো অব্ধি গ্রামীণ হাওড়ায় তিন জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। ঝড়ের তান্ডবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শ্যামপুর-১ ও বাগনান-২ ব্লক।

রূপনারায়ণ নদের তীরবর্তী বাগনান-২ ব্লকে ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালিয়েছে আমফান। এই ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে পড়েছে কয়েক হাজার বড়ো গাছ, ট্রান্সফর্মা ও অজস্র কাঁচা বাড়ি। বাগনান-শ্যামপুর রোডের উপর বহু গাছ ভেঙে পড়ার কারণে বিকাল পর্যন্ত এই রাস্তায় যানচলাচল স্বাভাবিক করা যায়নি বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে, গ্রামীণ হাওড়ার দু’টি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র গড়চুমুক ও গাদিয়াড়াও লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। গড়চুমুক পর্যটন কেন্দ্রে ভেঙে পড়েছে বহু বিশালাকৃতির গাছ। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে ইলেকট্রিকের তার। গড়চুমুক পর্যটন কেন্দ্রের এক নিরাপত্তারক্ষী মৃত্যুঞ্জয় সিংহের কথায়, “ঝড়ের বিধ্বংসী দাপটে বহু গাছ ভেঙে পড়েছে।

মৃগদাবের ভিতরের গাছ ভেঙে পড়ার পরই হরিণগুলো ভয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিয়েছিল। এমন ঝড় আগে কখনো দেখিনি।” উলুবেড়িয়া-শ্যামপুর ও শ্যামপুর-গাদিয়াড়ার রাস্তা ও ভিতরের গ্রামে ভেঙে পড়েছে কয়েক হাজার গাছ,ইলেক্ট্রিক পোল। গাদিয়াড়া পর্যটন কেন্দ্রের সরকারি লজটিও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। লজের গেটের সামনে ভেঙে পড়েছে একটি বৃহৎ ইউক্যালিপটাস গাছ।

গাদিয়াড়া পর্যটন কেন্দ্র সংলগ্ন বহু দোকানের চাল উড়ে গেছে। ব্যাপক সমস্যায় পড়েছেন এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। শুধুমাত্র শ্যামপুর মোড় থেকে গাদিয়াড়া যাওয়ার প্রধান রাস্তার উপরেই উপড়ে পড়েছে প্রায় শ’খানেক গাছ। অন্যদিকে, উলুবেড়িয়া শহর,উলুবেড়িয়া-১ ও ২ ব্লকও ঝড়ের প্রভাবে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উলুবেড়িয়া পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডেও বহু গাছ ভেঙে পড়েছে। মহকুমাশাসকের দপ্তরের সামনে একটি বিশালাকৃতির পুরানো গাছ ভেঙে পড়ে পাঁচিলের উপর। পাঁচিলটি ভেঙে গেলেও মহকুমাশাসকের কার্যালয়ের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ভাগীরথী সংলগ্ন উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের বহিরা, কালীনগর,হীরাপুর এলাকাও ঝড়ের ফলে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ভেঙে পড়েছে কয়েকশো বড়ো গাছ ও বহু কাঁচা বাড়ি। কোথাও কোথাও উড়ে গিয়েছে বাড়ির টিনের চাল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাস্তার পাশের বহু দোকান। প্রশাসন সূত্রে খবর, শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী উলুবেড়িয়ার রাজাপুর থানা এলাকার সুমদার বাসিন্দা ভারতী প্রামানিক (৫০) ও এক‌ই থানা এলাকার বানিবন জগদীশপুর এলাকার রুকশুনা খাতুন ঝড়ের সময়ে নিজেদের বাড়ি ভেঙে পড়লে তার তলায় চাপা পড়ে মারা যান।

এছাড়াও আর একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও তার পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, আমতা-১, আমতা-২ ও উদয়নারায়নপুর ব্লকেও ঝড়ের যথেষ্ট প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। আমতা-বাগনান রোডের উপর একাধিক বড়ো গাছ, ট্রান্সফর্মা ভেঙে পড়ায় বন্ধ বিপর্যস্ত যান চলাচল।

ভোরের আলো ফুটতেই আম্ফানের দানবীয় তান্ডবের দগদগে স্মৃতিকে সাথে নিয়েই গ্রামীণ হাওড়ার বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ নিজের নিজের এলাকায় ভেঙে পড়া গাছ সরাতে শুরু করেন। প্রশাসনের তরফেও এন.ডি.আর.এফ ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরাও বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের কাজ শুরু করেন।