মহাকব্যের শিক্ষা মানুষকে যুগ যুগ ধরে জ্ঞানে, চেতনায় সমৃদ্ধ করেছে। জীবন ধারনের প্রয়োজনীয় উপাদান যেমন সে সংগ্রহ করে প্রকৃতি থেকে, তেমনি মহাকাব্যের থেকে পুষ্ঠ তার জীবন সাধনা। মহাকাব্য এক নদীর মতই, যুগ যুগ ধরে মানুষকে এবং তার সভ্যতাকে সিক্ত করেছে, শিখিয়েছে আদর্শ জীবনের ধারা। ভারতীয় সভ্যতায় রামায়নের গুরুত্ব অপরিসীম। মহাকাব্যের গতিশীলতা আদি অনন্তকাল থেকে প্রবাহমান। মানুষ অনেক কিছু শিখেছে মহাকব্যের শ্রেষ্ঠ চরিত্র পুরুষোত্তম শ্রীরামের থেকে। বিনিয়োগের জগতেও তিনি অনুকরণীয়, সাত কান্ড রামায়ন থেকে চিনে নেওয়া যাক সফল বিনিয়োগকারী হবার দশ টি পথ-
১) নিয়মানুবর্তীতা ও অধ্যাবসায়:- এই দুটি গুণই শ্রীরাম- চরিত্রের অন্যতম দিক। বিনিয়োকারী হিসাবে আপনাকে মানতে হবে বাজারের নিয়মকে। ঠিক সময়ে কেনা ও ঠিক সময়ে বিক্রি। আর এই গুনকে রপ্ত করতে গেলে আপনাকে চোখ কান খোলা রাখতে হবে অর্থাৎ বাজার স্বংক্রান্ত অধ্যাবসায়।
২) শ্রীরাম অস্ত্র বিদ্যায় শ্রেষ্ঠ কিন্তু তিনি বরাবর তাঁর গুরুর থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাকেই বেশি করে গুরুত্ব দিতেন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি তাঁর গুরুর বানী কে অনুসরন করতেন। আপনিও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে পারেন। মনে রাখবেন সব কাজ একার দ্বারা সম্ভবপর নয়, তাই আপনাকে বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে হবে এবং সফল বিনিয়োগকরী হয়ে উঠতে হবে।
৩) শ্রীরামের সাফল্যের পিছনে অন্যতম অবদান তাঁর বানর সেনাদের। তাঁদের এই “সৎসঙ্গ” শ্রীরামকেও প্রভাবিত করেছে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও দেখবেন আপনার আশেপাশে লোকজনদের। তাঁরা যদি বিনিয়োগ সম্পর্কে সবসময় নেতীবাচক চিন্তাভাবনা আপনার সামনে প্রকাশ করে, আপনিও সেই পথে অগ্রসর হবেন। সুতরাৎ আপনার সঙ্গও আপনার বিনিয়োগ মনস্তত্ত্বের ওপর প্রভাব বিস্তার করবে। কথাতেই আছে “সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস”।
৪) রামচন্দ্র যেমন ছিলেন শ্রী বিষ্ণুর সপ্তম অবতার তেমনি তিনি বিনয়ের অবতারও। বাস্তব জীবনেও দেখা যায় যিনি বিনয়ী সাফল্যও তাঁর চিরসঙ্গী। বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও এই তত্ত্ব অবশ্যই কার্যকর। আর শ্রীরাম সফল হয়েছেন জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে। তেমনি বিনিয়োগকারীও সফল হন তাঁর জীবন থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার রূপায়ন ঘটিয়ে। কোন বিনিয়োকারী ভুল করবেন না এটা হয় না। কিন্তু সফল বিনিয়োগকারী এক ভুলকে দুবার করেন না।
৫) “বিন্দু থেকেই সিন্ধু” প্রচলিত কথা যেমন রামসেতুর সঙ্গে অতপ্রত ভাবে জড়িত তেমনি বিনিয়োগেও। বানর সেনাদের ছোটো ছোট অবদান রূপ নিয়েছিল রামসেতু- তে যা শ্রীরামকে পৌছে দিয়েছিল লঙ্কায়, তেমনি আপনার ছোট ছোট SIP সময়ের সাথে সাথে আপনাকেও পৌঁছে দেবে আপনার অর্থনৈতিক লক্ষ্যে, যা আপনাকে দিতে পারে “Financial Freedom“
৬) ইন্দ্রজিতের শক্তিশেলের আঘাতে লক্ষণ যখন ধরাশায়ী, সেই সময়ে তাঁর জীবনে সুধা হয় সঞ্জীবনী যা নিয়ে এসে ছিলেন হনুমানজী। আজকের দিনে মানুষের অন্যতম মাথা ব্যাথার কারন আকাশ ছোঁয়া চিকিৎসার খরচ। তাই আপনারও প্রয়োজন সঞ্জীবনী সুধার। Health Insurance আজকের দিনের সঞ্জীবনী।
৭) রামায়নে সীতামার লক্ষণ রেখা পার হওয়ার জন্যই তাঁকে রাবন অপহরন করেন। আপনার বাস্তব জীবনে সীতামা যদি আপনার সম্পদ হয়, আর সেই সম্পদ কে রক্ষা করতে গেলে আপনাকেও লক্ষণ রেখা টানতে হবে, অর্থাৎ আপনার Financial Budget ঠিক ঠাক হতে হবে। বাজেট অতিক্রম করে গেলেই আপনার সম্পদ রূপী সীতামা কে অপহরন করতে পারে রাবন রূপী মুদ্রাস্ফীতি এবং unproductive loan, দুটোই আপনার সম্পদ সৃষ্টির জন্য অন্তরায়।
৮) শ্রীরামের থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার অন্যতম হল “Art of giving”, যা তিনি মানবজাতীকে শিখিয়েছেন। দিতে না শিখলে যেমন আপনি পাবার যোগ্য হবেন না, তেমনি সফল বিনিয়োগকারী হতে গেলে আপনাকে পাঠ নিতে হবে “Art of giving” এর। বর্তমান কালের অন্যতম প্রধান বিনিয়োগকারী Warren Buffet ও তাঁর বিনিয়োগ শিক্ষাতে এই “Art of giving”- এর উপর জোর দিয়েছেন।
৯) রামচন্দ্র শান্তিতে জল সমাধি দিয়েছিলেন কারন তাঁর যোগ্য উত্তরসূরীদের হাতে তাঁর রাজ্যকে তুলে দিয়ে যেতে পেরেছিলেন বলে। লব-কুশ ছিলেন তাঁর সুসন্তান এবং সুশাসকও। তাই আপনার সৃষ্ঠ সম্পদকে আপনার উত্তরসূরীদের হাতে তুলে দিয়ে যেতে পারছেন কিনা তা অবশ্যই দেখবেন, অর্থাৎ সেরে নেবেন আপনার Esate Planning এবং অবশ্যই আপনার সন্তানদের সম্পদ সৃষ্টির যোগ্য করে তুলবেন। সন্তানদের যোগ্য করে না তুললে আপনার জীবনটা “ষোলো আনাই মাটি”।
১০) অনেক বিনিয়োকারীকে বলতে শুনেছি শেষ বয়সে এসে বিনিয়োগ করে কি লাভ, মনে রাখবেন ঋষি বাল্মীকি প্রথম জীবনে ছিলেন দস্যু রত্নাকর। তিনি সাধনা শুরু করার সময় রাম মন্ত্র উচ্চারণের জায়গায় মরা বলতেন। সাধনার গুনে অর্থাৎ অধ্যাবসায়ে মরা পরিবর্তিত হয়েছে রামে। আপনিও বিনিয়োগ শুরু করুন, বয়স নিয়ে ভাববেন না দেখবেন একদিন আপনার বিনিয়োগেও শ্রীরামের আশীবাদ হয়ে বর্ষিত হবে।
যাই হোক মানব জীবনেও পাথেও হোক শ্রীরামের কর্ম ও তার আদর্শ। আপনার বিনিয়োগের জীবনকেও উদ্ভাসিত করতে গেলে অবশ্যই গ্রহন করতে হবে মহাকাব্যের মনি-রত্ন গুলিকে। মহাকব্যের মহানায়ক কেবল আপনার বিনিয়োগ জীবনকেই নয়, আপনার সামগ্রিক জীবনকে করবে সুসজ্জিত ও সুসম্পন্ন।
[লেখক – পার্থপ্রতিম চট্টোপাধ্যায়, বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ]