নিজস্ব সংবাদদাতা : সকাল হলেই ভিড় জমতে শুরু করে বিভিন্ন মন্দিরে। পাশাপাশি, পুরোহিতরা একের পর এক দোকানে হাজির হন। পুজোর পাঠ মিঠলেই দুপুর থেকেই নীল – লাল সরবৎ আর মিষ্টির প্যাকেটের দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু। লকডাউনের জেরে অক্ষয় তৃতীয়ার সেই চিরাচরিত ছবিটা আজ উধাও। চারিদিক জুড়ে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা।একমুঠো অন্নের জন্য হাহাকার। এরকমই এক অচেনা অক্ষয় তৃতীয়ার সাক্ষী থাকল গ্রামীণ হাওড়ার বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। লকডাউনের জেরে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ দোকানপাট। একদিকে প্রশাসনের কড়া হুঁশিয়ারি অন্যদিকে চরম আর্থিক মন্দার জেরে গ্রামীণ হাওড়ার সিংহভাগ ব্যবসায়ী দোকানপুজো করছেন না।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু দোকান খোলার নির্দেশ জারি করা হলেও হাওড়া যেহেতু করোনা সংক্রমণের ‘হটস্পট’ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে তাই হাওড়ার ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। তাই স্বভাবতই এখনো দোকানপাট বন্ধ। অন্যান্যবার উলুবেড়িয়া, আমতা, শ্যামপুরের বিভিন্ন মন্দিরে বহু মানুষ সকাল থেকেই পুজো দেওয়ার উদ্দেশ্যে ভিড় জমালেও এবার কার্যত দেখা নেই দর্শনার্থীদের। আমতার প্রসিদ্ধ মেলাইবাড়ীতে এদিন পুজো হলেও খুব অল্প সংখ্যক স্থানীয় ব্যবসায়ী সামাজিক দূরত্ব মেনে পুজো দিতে আসেন। অন্যদিকে, আমতার উদং কালীমাতা আশ্রমে বিভিন্ন মন্দিরে নিত্যপূজা চললেও লকডাউনের প্রথম দিন থেকে দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ আশ্রম চত্বর। কেবল আমতা নয়, বাগনান কিমবা উলুবেড়িয়া কালীবাড়ি সব জায়গাতেই একই চিত্র। পাশাপাশি, অক্ষয় তৃতীয়ায় মিষ্টির দোকানে লাড্ডু, গজা, নিমকি কেনার ভিড় লাগে।
মিষ্টির দোকানের কর্মচারীদের নিঃশ্বাস ফেলার সময় থাকেনা। করোনার থাবায় সেই ছবিটাও একধাক্কায় বদলে গেছে। সরকারি নির্দেশে মিষ্টির দোকান দিনের কিছুটা সময়ের জন্য খোলার কথা বলা হলেও গ্রামীণ হাওড়ার অনেক মিষ্টির দোকানের শাটার এখনো বন্ধ। আমতার এক প্রসিদ্ধ মিষ্টি ব্যবসায়ীর কথায়, “যানচলাচল বন্ধ থাকায় কারিগররা আসতে পারছেন না। তার উপর মেদিনীপুর থেকে আসা ছানার জোগানও এখন স্বাভাবিক হয়নি। স্থানীয় ছানায় অল্প মিষ্টি করছি। কিন্তু, খদ্দেরদের দেখা নেই।” বিষাদের সুর উলুবেড়িয়ার এক মিষ্টি ব্যবসায়ীরও গলায়। তিনি বলেন, “অন্যান্যবার আজকের দিনে ৪০-৫০ হাজার টাকার অর্ডার থাকলেও এবার একটাকারও অর্ডার নেই। একমুঠো অন্নের জন্য দিন আনা খাওয়া পরিবারগুলি যখন লড়াই চালাচ্ছে তখন কীভাবে মিষ্টির অর্ডার আসে বলুন!” একদিকে লকডাউন, অন্যদিকে দীর্ঘদিন দোকান বন্ধ থাকায় বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা। তাই এবার গ্রামীণ হাওড়ার বেশিরভাগ ব্যবসায়ীই বাড়িতে কোনোরকমে পুজো সেরেই অক্ষয় তৃতীয়া সম্পন্ন করবেন।