নিজস্ব সংবাদদাতা : খলিশানী রবীন্দ্র সঙ্ঘের পরিচালনায় স্থানীয় গ্রামবাসীর সহযোগিতায় ৯৯ বৎসর ধরে এক আড়ম্বরহীন পুজো অনুষ্ঠিত হয়ে চলেছে খলিশানী সুপারীবাগানে। এই পুজোটির বিশেষত্ব হল এখানে দেবীর মহিষমর্দিনী রূপের বদলে ভগবান শ্রী রামচন্দ্রের অকালবোধন এর আদলে প্রতিমা হয়। এখানে মা দুর্গার সাথে শ্রী রামচন্দ্র, বজরঙ্গবলী, জাম্বোমান, লক্ষ্মন, বিভীষণ ও রাবনের প্রতিমা থাকে। ষষ্ঠীতে বিল্ববাসিনী দেবীর পুজো করে বোধন, সপ্তমীতে নবপত্রিকা স্নান ও সকল পুজোই হয়। সন্ধিপুজোতে পশুবলিদান হয় না, বদলে কদলী বলি হয়। এই পুজো উদ্যোক্তারা সকলেই মাতৃশক্তি। এই পুজোর যুগ্ম সম্পাদিকা অনুশ্রী চক্রবর্তী জানান, ” আমাদের পুজো এবছর ৯৯ বৎসরে পদার্পণ করল, পূর্বপুরুষদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা দেবীর অকালবোধন রূপের পুজো করি।” পুজোর সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় সমাজসেবী শোভন নায়েক জানান, ” আসলে শরৎকাল হল সূর্যের দক্ষিনায়ণ।
এসময় দেবতাদের ঘুমের সময়। কিন্তু রাবন বধের জন্য ভগবান শ্রী রামচন্দ্র অকালে দেবীর বোধন করেছিলেন তাই এই পুজোর নাম।অকালবোধন। শরৎকালের দুর্গাপূজা মানেই অকালবোধন পুজো। আসল দুর্গাপূজা হয় বসন্তকালে দেবী বাসন্তী পুজো। ” তবে দেবীর সাথে ব্রাহ্মণবেশী রাক্ষসরাজ রাবনকে পুজো সম্পর্কে শোভনবাবু বলেন, ” আসলে দুর্গাপূজার জন্য ত্রিসন্ধ্যা গায়ত্রী জপ করা ব্রাহ্মণ এর দরকার। রামচন্দ্র দেবগুরু বৃহস্পতি, দৈত্যগুরু শুক্রাচার্য, সহ সকল মুনির কাছে যান কিন্তু দেবীর পুজো করতে তাঁরা অসম্মত হন কারন তাদের কারোরই ত্রিসন্ধ্যা গায়ত্রী প্রতিদিন করা হয়নি। পরে সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার আদেশে রামচন্দ্র রাবন বধের জন্য রাবণের কাছে যান পুজোর জন্য। রাবণ রাক্ষস হলেও তিনি পরম ধার্মিক এবং মায়ের ভক্ত ছিলেন,। তাই মায়ের পুজো করেন রাবণ। সন্ধিপুজোর সময় ১০৮ টি নীলপদ্ম দেবীর পায়ে নিবেদন করার কথা থাকলেও হনুমান ১০৮ টি নীলপদ্ম নিয়ে আসেন। দেবী একটি পদ্ম লুকিয়ে রাখেন। নিরূপায় পদ্মলোচন রামচন্দ্র তখন তাঁর নীল আঁখি তীর দিয়ে তুলে দেবীর পায়ে নিবেদন করতে যান, রামচন্দ্রের ভক্তিতে প্রসন্ন হয়ে দেবী তাঁকে লুকানো পদ্মটি দিয়ে দেন এবং রাবণ বধের আশীর্বাদ করেন” রামায়ণের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এলাকার মানুষের ভক্তিতে এই পুজোটি অনবদ্য হয়ে উঠেছে।