নিজস্ব সংবাদদাতা : অন্যান্য বছর আজকের দিনে থাকে চূড়ান্ত ব্যস্ততা। ‘বিশ্ব নাট্য দিবস’ বলে কথা – খাওয়া তো দূরের কথা, নিঃশ্বাস ফেলার সময় টুকুও থাকেনা গ্রামীণ হাওড়ার বাগনান – ১ ব্লকের চন্দ্রপুর গ্রামের পূর্বপাড়ার বাসিন্দা মনীন্দ্র বেরার। কিন্তু, এবছরের ‘বিশ্ব নাট্য দিবস’টা যে বড়োই বর্ণহীন। ‘করোনা’র থাবায় কোলকাতার বিভিন্ন রঙ্গমঞ্চগুলিতে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই বন্ধ থিয়েটারের কাজ। মনীন্দ্র বাবু সেভাবে রঙ্গমঞ্চে অভিনয় না করলেও বর্তমান বাংলার নাট্য আন্দোলনের এক একনিষ্ঠ যোদ্ধা।
কোলকাতার নামীদামী বিভিন্ন থিয়েটার দলে সেট তৈরির কাজ করেন এই প্রৌঢ় থিয়েটার কর্মী। আর তা দিয়েই কোনোরকমে সংসারের চারটি পেট চলে। কাজ হলে দুটো পয়সা আসে। লকডাউনের গেড়োয় বেশ কিছুদিন কোনো কাজের ডাক আসেনি তিলোত্তমার নামজাদা দলগুলি থেকে। তাই করোনার জেরে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসারে একমাত্র উপার্জনকারী সদস্যের কার্যত বেকার হয়ে যাওয়ায় সংসার জুড়েই আজ কেবল একমুঠো অন্নের জন্য অন্যের মুখ চেয়ে থাকা। ইতিমধ্যেই বিশেষ সূত্র মারফত তাঁর অসহায়তার কথা জেনে এগিয়ে এসেছে আমতার স্বেচ্ছাসেবী অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্ন দেখার উজান গাঙ’।
এই সংকটময় পরিস্থিতিতে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে চাল, ডাল, আলু, চিঁড়া সহ অন্যান্য সামগ্রী। ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তাঁকে আজই চাল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় বলে জানান এই নাট্যকর্মী। মনীন্দ্র বাবু জানান, তাঁর দু’ই মেয়ে ও এক ছেলে। বড়ো মেয়ের বিয়ে হয়েছে। একদিকে ছেলের বেকারত্ব আর অন্যদিকে ছোটো মেয়ের বিয়ের চিন্তা নিয়েও কেবল থিয়েটারকে ভালোবেসে একমুঠো অন্ন সংস্থানের তাগিদে লড়াই চালাচ্ছেন। আজ মনীন্দ্র বাবুর কপাল জুড়ে চিন্তার ভাঁজ। লকডাউনের পরে আর্থিক হাল আরও খারাপ হবে – জুটবে তো তাঁর কাজ! তবুও থিয়েটারকে ভালোবেসে, রঙ্গমঞ্চকে সাথে নিয়ে অভাব, দারিদ্র্য আর হতাশা নিয়েই নিজেদের রঙ্গমঞ্চে লড়াই চালিয়ে যান বাংলার গ্রুপ থিয়েটারের এই একনিষ্ঠ মানুষগুলি।