পৃথ্বীশরাজ কুন্তী : হাওড়া জেলার জনপ্রিয় জনপদগুলির মধ্যে অন্যতম বাগনান। ‘বাগনান’ নামকরণের ইতিহাস খুঁজতে গেলে প্রথমেই উঠে আসে বাঘেশ্বরী দেবীর কথা। দেবী বাঘেশ্বরী শুধু বাগনান নামকরণের সাথে নন, জড়িয়ে আছেন বাগনানের প্রাচীন সংস্কৃতি ও ভাবাবেগের সাথে। তাই প্রতিবছরই দেবীর আরাধনায় সাড়ম্বরে মেতে ওঠেন বাগনান সহ বিভিন্ন গ্রামের অসংখ্য মানুষ। করোনা আবহে দাঁড়িয়ে কিছুটা জৌলুশ কমলেও প্রচলিত রীতি মেনেই সুপ্রাচীন দেবী বাঘেশ্বরীর আরাধনায় মেতে উঠতে চলেছে বাগনান।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, প্রায় চারশো বছর আগে বর্তমান বাগনান কাছারিপাড়া এলাকার পূর্ব ও পশ্চিম দিক দিয়ে যথাক্রমে দামোদর ও রূপনারায়ণ নদ প্রবাহিত হত। এই দুই নদের চরভূমি ছিল জঙ্গলাকীর্ণ ও ব্যাঘ্রসঙ্কুল। শোনা যায়, বাঘের আক্রমণে প্রায়শই প্রাণ যেত স্থানীয় মানুষের। বাঘের হাত থেকে রক্ষা পেতে উভয় নদের চরে দক্ষিণরায়, বনবিবি ও বাঘেশ্বরী দেবীর আরাধনা শুরু হয়।
জানা যায়, ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্তিমলগ্নে ব্রিটিশদের রাজত্বকালে স্থানীয় জমিদার গোপাললাল শীল নদীর চর থেকে বাঘেশ্বরী দেবীকে তুলে এনে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন। পরে তিনি কাছারিপাড়া এলাকায় বাঘেশ্বরী ও বৃন্দাবন মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী সময়ে মন্দিরটি স্থানীয় মানুষের উদ্যোগে সংস্কার করা হয়। পুনঃনির্মিত এই মন্দিরে মায়ের আরাধনায় মেতে ওঠেন বহু মানুষ। শুধু বাগনান কিমবা হাওড়া নয়, বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মায়ের দ্বারে ছুটে আসেন বহু ভক্ত। মন্দির সংলগ্ন ‘কল্পতরু’ বৃক্ষে নিজেদের মনস্কামনা পূরণ করতে সুতো বাঁধেন।
আঞ্চলিক গবেষকদের থেকে জানা যায়, আরবি শব্দ ‘নান’ কথাটির অর্থ ‘চরভূমি’। নদীর চরে বাঘেশ্বরী দেবীর পুজো হওয়ায় এই এলাকাকে পূর্বে ‘বাঘনান’ বলা হত। পরবর্তীকালে ‘বাঘনান’ অপভ্রংশ হয়ে ‘বাগনান’-এ রূপান্তরিত হয়েছে। তবে নিউনর্মাল পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এবার পুজোর আয়োজনে বেশ কিছু কাটছাঁট করা হয়েছে। বাঘেশ্বরী মন্দির সেবা সমিতির সম্পাদক চন্দ্রনাথ বসু বলেন,”বাঘেশ্বরী দেবীর আরাধনা বাগনান সহ পাশ্ববর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষের এক অভূতপূর্ব আবেগ।
তাই এই কঠিন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে তিথি অনুযায়ী আগামী সোমবার পুজো অনুষ্ঠিত হতে চলেছে।” চন্দ্রনাথ বাবু জানান,”এবার সামগ্রিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আমরা ভক্তদের ভোগ বিতরণ ও আতসবাজি প্রদর্শন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পাশাপাশি, প্রতিবছর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে দামোদর নদ থেকে জল তুলে এনে বাগনান শহর পরিক্রমা করা হত। তবে এবার তা নিয়মরক্ষার জন্য একদমই সংক্ষিপ্ত আকারে হবে।”