নিজস্ব সংবাদদাতা : প্রতিবেদনটি লিখতে বসে হাওড়া স্টেশনের সে-ই চেনা ছবিটা চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। ঠেলাগাড়ির ব্যস্ততা কিমবা ট্রেন থেকে নামলে ওদের হাঁকাহাঁকি, ছোটাছুটি। সেই চেনা ছবিটা হঠাৎই যেন কোথাও হারিয়ে গেল। এখানেও বসল করোনার থাবা। দেশজুড়ে যাত্রীবাহী সাধারণ রেল পরিষেবা বন্ধ হওয়ার সাথে সাথেই প্ল্যাটফর্ম জুড়ে কেবল শূন্যতা। স্টেশন চত্বরে মাঝেমধ্যে ওদের দেখা মিললেও সাধারণ যাত্রীদের দেখা নেই দীর্ঘ কয়েকমাস। আর তার জেরেই চরম সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন বহু ‘কুলি’। কোনোরকমে আধপেটা অবস্থায় তাঁরা দিনযাপন করছেন।
দশকের পর দশক রেল স্টেশনে আপনার যাত্রীদের ভার বহন করে নিয়ে গিয়েছে ওরা। নিঃসন্দেহে অর্থের বিনিময়ে। তবু ভার তো বয়েছে। সেই ভার নেওয়া হঠাৎ করেই বন্ধ হয়। করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আরও কয়েক দফায় পর পর ট্রেন বাতিলের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ নির্দেশিকায় ১ লা জুলাই থেকে ১২ ই অগস্ট পর্যন্ত সমস্ত সাধারণ দূরপাল্লার এবং লোকাল ট্রেন বাতিল করা হয়েছিল। শুধুমাত্র বিশেষ ট্রেন চলবে বলে জানানো হয়। এবারও ট্রেন বাতিলের সময়সীমা এক ধাক্কায় আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেই ভাবেনি ভার না বহনের দিন এত দীর্ঘ হবে। দেশজুড়ে আনলক-৪ পর্ব শুরু হলেও ওদের ভাগ্যের চাকা সেই আটকে রেলের বন্ধ চাকার তলাতেই।
বিভিন্ন শহরের মধ্যে শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেন চালু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। দিল্লি থেকে মুম্বই, কলকাতা, বেঙ্গালুরু একাধিক শহরে ট্রেনে চেপে লকডাউন মিটে যাওয়ার পরও বাড়ি ফিরছেন ভিন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া। কিন্তু, সমস্যায় পড়েই থেকেছে কুলিরা। অভিযোগ বহু। প্রতিকার নেই। রোজগারের অভাবে দিনের পর দিন অবস্থা খারাপ হচ্ছে ওদের। কেউ বলছেন, ভোরবেলায় ট্রেনের আওয়াজে ঘুম ভাঙত। এখন ঘুমই আসে না দু’চোখে। সুনশান স্টেশন চত্বর। তবু প্রতিদিনের অভ্যাসমতো সকাল হলেই এখনও ছুটে যান স্টেশনে।
কেউ আবার বলছেন, বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করা আছে স্টেশনে যাওয়ার পথ। বাঁশ ডিঙিয়েই প্ল্যাটফর্মে যাই। হেঁটে বেড়াই। দুপুরে বাড়ি ফিরে যাই। সুন্দর রাম নামে এক কুলি জানালেন, “কাজ নেই। বাড়িতে বসে থাকতেও ভালো লাগে না। কবে ট্রেন চালু হবে তাও জানি না। রোজগার নেই বললেই চলে। যেটুকু হচ্ছে ওতে সংসার চলে না। কোনও সরকার সাহায্যের কথাও বলে না।”
রতন লাল নামে অপর এক কুলির অভিযোগ, “কিছু না পাক রেশনটা সবাই মোটামুটি পেয়েছে। আমরা বিহার থেকে এসে এখানে কাজ করি। ট্রেন বন্ধ হওয়ায় বাড়ি যেতে পারিনি। তাই রেশন কার্ড না থাকায় রেশন পাইনি। কেউ দিয়েও যায়নি। আবার স্পেশাল ট্রেন চালু হতে নতুন আশায় থেকে যাই। এতে সমস্যা আরও বেড়েছে। রোজগার তো হলই না উপরন্তু চিন্তা আরও বেড়ে যাচ্ছে।”
অনেকের অবস্থা আরও খারাপ। জানাচ্ছেন, ঘরের ভিতরে অভাব, আর বাইরে করোনা রোগের আতঙ্ক। তাদের কাছে লড়াইটা বড়ই কঠিন হয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। অনেকে রেশন পেয়েছেন। অনেকের অভিযোগ, সে সব কিছুই মেলেনি। দিনের ৪০০ টাকার রোজগার এসে ঠেকেছে ১০০ টাকায়। কবে ঠিক হবে সবকিছু সেদিকেই তাকিয়ে ওরা!