নিজস্ব সংবাদদাতা : হাওড়া জেলা জুড়ে কর্মীর অভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রন্থাগার। বহু গ্রন্থাগারিক অবসর নেওয়ায় এবং গ্রন্থাগারে নিয়োগ না হওয়ায় এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক গ্রন্থাগার। তেমনি একটি গ্রন্থাগার, শ্যামপুরের প্রিয়নাথ সাহিত্য মন্দির। শতাব্দী প্রাচীন এই গ্রন্থাগার বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে বিগত চার বছর ধরে। সেখানে পৌঁছে দেখা গেল চারিদিক ভরে গেছে আগাছায়। তারই মাঝে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে এই প্রাচীন গ্রন্থাগারের দ্বিতল ভবনটি। বন্ধ জানালার গায়েও জন্মেছে আগাছা।
এলাকার মানুষের বক্তব্য চাকরি প্রার্থী যুবক থেকে শুরু করে এলাকার ছাত্র ছাত্রী বা এলাকার অবসরপ্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ সকলেই আসতেন এই গ্রন্থাগারে। চলতো গ্রুপ স্টাডি। গ্রন্থাগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কারণে চাকরিপ্রার্থীরা চাকরির প্রস্তুতির জন্য টাকা খরচ করে ছুটছেন বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা গুলিতে। এলাকার সকল শ্রেণীর মানুষ সমস্যায় পড়েছেন এই গ্রন্থাগারটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায়। স্থানীয় বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব অশোক মন্ডল বলেন এক সময় এলাকার বহু ছাত্র ছাত্রী থেকে শুরু করে চাকরিপ্রার্থী, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি সকলেই এই গ্রন্থাগারে পড়াশোনা করতে আসতো।
এখানে অনেক ভালো ভালো বইয়ের স্টক রয়েছে। সরকার এই সব বই কেনার জন্য বহু টাকা খরচ করেছে। আগে একজন পিয়োন এই গ্রন্থাগার চালাতো। তারপর একজন গ্রন্থাগারিক এসেছিলেন। তারা অবসর নেওয়ায় পর থেকেই প্রায় চার বছর ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে এই গ্রন্থাগার। তিনি বলেন শ্যামপুরে আরও কয়েকটি গ্রন্থাগার বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। কেন যে সরকার কর্মী নিয়োগ করে বন্ধ গ্রন্থাগার গুলি খোলার ব্যবস্থা করছেনা? জানিনা। স্থানীয় যুবক সুমন মাইতি বলেন আগে সব সময় গ্রন্থাগারটি জমজমাট থাকতো। প্রায় পাঁচ বছর আগে থেকেই গ্রন্থাগারিক নেই।
আগে মাঝে মাঝে খোলা হলেও চার বছর ধরে পুরোই বন্ধ। তিনি আরো বলেন অনেক দামি দামি বই রয়েছে এই গ্রন্থাগারে। শুধুমাত্র গ্রন্থাগারিকের অভাবে গ্রন্থাগার বন্ধ থাকায়, সেগুলো পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। জানা গেছে হাওড়ার জেলার বিভিন্ন ব্লক মিলে প্রায় সাতাশটি গ্রন্থাগার কর্মীর অভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। শ্যামপুরের নাউলের প্রগতি পাঠাগারটি কর্মীর অভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে ছিল। একবছর আগে এক অবসরপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিককে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করেছিল গ্রন্থাগার দফতর। কিন্তু গ্রন্থাগারটিতে বই সহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী না থাকায় বিগত একবছর ধরে বেতন পেলেও, গ্রন্থাগারে এসে কাজ না করেই ফিরে যেতে হয়েছে এই অবসরপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিককে।
পাশাপাশি বাগনানের মুগকল্যান এলাকার পল্লী ভারতী, উলুবেড়িয়ার বানিবন এলাকার কল্যাণব্রত সংঘ, বাউড়িয়ার খাসকামার তাজমহল লাইব্রেরী সহ সাতাশটি গ্রন্থাগার কর্মীর অভাবে বন্ধ হয়ে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ এল আই এস মুভমেন্টের সদস্য মহঃ আজাহারউদ্দিন বলেন একটা সময় গ্রন্থাগার গুলি ভরে থাকতো। ছাত্র ছাত্রীরা পড়াশোনা করতো, গল্পের বই পড়তো। প্রবীণ ব্যক্তিরা পড়াশোনা করে সময় কাটাতেন। তিনি বলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রায় এক হাজার গ্রন্থাগার হয় বন্ধ বা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মুখে। তিনি আরো বলেন আমাদের সংগঠনের তরফ থেকে প্রশাসনের সর্বস্তরে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
আমরা গ্রন্থাগার মন্ত্রীর কাছেও গিয়েছিলাম। উনি আমাদের জানিয়েছেন গ্রন্থাগার সংক্রান্ত সমস্ত ফাইল মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো আছে। তাই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের আবেদন, যাতে করে উনি এই বিষয়ে দ্রুত হস্তক্ষেপ করেন এবং এই সমস্যার সমাধান হয়। রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বলেন বাম সরকার যেভাবে ছেড়ে গেছে তার থেকে বেরিয়ে আসতে সময় লাগবে। বাম আমলে বন্ধ গ্রন্থাগারের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। আমাদের সরকার সেগুলো খোলার চেষ্টা চালাচ্ছে। কর্মী সংখ্যা কমেছে ঠিকই। সমস্ত ফাইল মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। আমরা অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে সব গ্রন্থাগার খোলার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন কোন এলাকার মানুষ যদি লিখিত ভাবে কোন গ্রন্থাগারের সমস্যার কথা জানায়। আপাতত সেখানে কেয়ারটেকার নিয়োগ করে গ্রন্থাগার খোলার ব্যবস্থা করা হবে।