পৃথ্বীশরাজ কুন্তী : ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির সপ্তাহান্তের গন্তব্যগুলির মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে গ্রামীণ হাওড়ার বাগনানের সামতাবেড়। রূপনারায়ণ তীরবর্তী এই গ্রামের সাথে জড়িয়ে রয়েছে বাঙালির আবেগ, ইতিহাস ও ঐতিহ্য। আর থাকবেনাই বা কেন। সামতাবেড় গ্রামের বাড়িতেই জীবনের দীর্ঘ বারোটা বছর কাটিয়েছিলেন বাঙালির প্রিয় অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। এই বাড়িতে বসেই ‘রামের সুমতি’, ‘শ্রীকান্ত’, ‘পথের দাবি’ সহ একাধিক উপন্যাস লিখেছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই বরেণ্য ব্যক্তিত্ব।
তাঁর স্মৃতিবিজড়িত সেই বাড়ি, ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী ও শরৎবাবুর বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে চলা রূপনারায়ণের অপরূপ রূপকে চাক্ষুষ করতে ফি বছরই এখানে পর্যটকের ভিড় লেগে থাকে। শীতকালে এই পর্যটনকেন্দ্রে পিকনিক করতে আসেন বহু মানুষ। অন্যান্য পিকনিক স্পটের মতোই এখানেও থার্মোকল ব্যবহার করে পিকনিক স্পটকে ভরিয়ে তোলেন চড়ুইভাতি করতে আসা মানুষজন। এবার থার্মোকল ‘ফ্রি’ পিকনিক স্পট গড়ার বার্তা নিয়ে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের সাইকেল আরোহীরা রূপনারায়ণ তীরবর্তী এই পর্যটনস্থলে হাজির হলেন।
রবিবার ‘হাওড়া সাইকেল আরোহী’ , ‘টু হুইলস’ সহ মোট ৭ টি সাইকেলপ্রেমী সংস্থার তরফে হাওড়া সদর থেকে দেউলটির সামতাবেড় গ্রামের শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি অব্ধি ‘লেটস গো দেউলটি’ নামক একটি সাইকেল রাইডের আয়োজন করা হয়। কোলকাতা, হাওড়া, হুগলী, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা থেকে প্রায় ৬৫ জন তরুণ-তরুণী নিজেদের সাইকেল নিয়ে এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। কুয়াশাজড়ানো ভোরেই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন অভিজিৎ, দেবস্মিতা, রাকেশরা। সকলে হাওড়ার নিবড়া মোড়ের ফুটবল মাঠে একত্রিত হয়ে সেখান থেকে শুরু হয় এই সাইকেল র্যালি। পথে দু-এক বার চা পানের বিরতি নিয়ে ধুলাগড়, উলুবেড়িয়া, বাগনান, দেউলটি হয়ে সকাল ১১ টা নাগাদ সামতাবেড়ে পৌঁছায় র্যালি।
কথাশিল্পীর বাড়িতে পৌঁছে সেই জীবন্ত ইতিহাস ঘুরে দেখার পাশাপাশি লেখকের বাড়ি সংলগ্ন মাঠে পিকনিক করতে আসা মানুষের কাছে থার্মোকল ব্যবহার বন্ধ করে তার পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব সামগ্রী ব্যবহারের অনুরোধ জানান তনয়া, দীপ, সুমনারা। তাঁরা চড়ুইভাতি করতে আসা মানুষজনের কাছে থার্মোকলের সুদূরপ্রসারী কুফল সম্পর্কে তুলে ধরেন।
এই সাইকেল র্যালির অন্যতম উদ্যোক্তা শিক্ষক রাকেশ দাস বলেন, “নিজেদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশে সাইকেলের অবদানকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা হাওড়া সাইকেল আরোহীর তরফে প্রতি রবিবারই হাওড়া শহর থেকে বিভিন্ন জায়গায় সাইকেল রাইডের আয়োজন করি। কোনোদিন যাই ব্যারাকপুর বর্তির বিল আবার কোনোদিন বা ময়দানের ভিক্টোরিয়া চত্বর কিমবা ডোমজুড়ের নোনাকুন্ডু। তবে আজকের এই আয়োজন একটু ভিন্ন। আজ আমাদের সাথে এই রাইডে সামিল হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের আরও ৬ টি সাইকেলপ্রেমী সংগঠন। এদের কেউ এসেছেন উত্তর কোলকাতা থেকে কেউবা ব্যারাকপুর থেকে। এমনকি পশ্চিম মেদিনীপুরেরও একটি সংগঠন দেউলটি থেকে আমাদের র্যালিতে যোগ দিয়েছে।”
রাকেশ বাবুর কথায়, “আমাদের এই র্যালির মাধ্যমে আমরা গ্রামীণ হাওড়ার মানুষের কাছে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতার বার্তা যেমন দিয়েছি তার পাশাপাশি শীতের মরসুমে জেলার জনপ্রিয় পিকনিক স্পট সামতাবেড়ে থার্মোকলের ব্যবহার বন্ধ করার বার্তা পৌঁছে দিয়েছি।” হাওড়া থেকে দেউলটি এই দীর্ঘ প্রায় ৫৫ কিমি পথ সাইকেলে অতিক্রম করতে সময় লেগেছে প্রায় ৩ ঘন্টা। পথে মানুষের কাছে পরিবেশবান্ধব সামগ্রী ব্যবহারের বার্তা দিতে ভোলেননি সাইকেল রুদ্র, প্রিয়া, সন্দীপের মতো তরুণ-তরুণীরা।