নিজস্ব সংবাদদাতা : নিজের রেজাল্ট জানার পর তার চোখের কোণে চিকচিক করে উঠেছিল আনন্দ অশ্রু। সেই কান্না যুদ্ধ-জয়ের, সেই কান্না স্বপ্নপূরণের পথে এক ধাপ এগিয়ে চলার। সংসার জুড়ে অভাব-অনটন তারই মাঝে সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে তুড়ি মেরে মাধ্যমিকে আমতা-১ ব্লকের শিবেরহানা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৬৭৭ নম্বর পেয়ে নিজের লড়াকু মানসিকতার নিদর্শন রাখল জঞ্জালীচক গ্রামের কিশোর পবিত্র চক্রবর্তী। পবিত্রের বাবা মলয় চক্রবর্তী জরির কাজ করে কোনোরকমে সংসার চালান। লকডাউনের জেরে জরিশিল্পেও মন্দা। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে দাদুর পুজো করার সামান্য কিছু টাকায় পবিত্রদের সংসার চলছে। ছোটো থেকেই পড়াশোনার প্রতি সে অত্যন্ত মনোযোগী। বরাবরই উজ্জ্বল তার মার্কশিট।
তার আর্থিক প্রতিকূলতার কথা জানতে পেরে তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন শিবেরহানা উচ্চ বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক। বই-খাতা কিনে দেওয়া থেকে অঙ্কের স্পেশাল গাইড দেওয়া—সবক্ষেত্রেই তাঁরা পবিত্রর পাশে দাঁড়িয়েছেন। মাধ্যমিকে বাংলায় ৯৭, ইংরাজিতে ৯৩, অঙ্কে ১০০, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৫, জীবন বিজ্ঞানে ৯৫, ইতিহাসে ৯৭ ও ভূগোলে ১০০ পেয়েছে আমতার এই প্রত্যন্ত গ্রামের কিশোর। এই কৃতির হতাশার সুরে বলে, “বাবা জরির কাজ করেন।মা গৃহবধূ। জরির কাজ করে বাবার সামান্য আয়ে কীভাবে আমার উচ্চশিক্ষা চলবে জানিনা!” পবিত্র চায় বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে জয়েন্ট দিতে। শিবেরহানা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাপস শীল জানান, “পবিত্র হত দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ওর পাশে আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ছিলেন। আগামীতে থাকবেন।” এখন প্রধান শিক্ষকের এই অভয় বাণীই পবিত্রর এগিয়ে চলার ভরসা।