নিজস্ব সংবাদদাতা : এক বছর আগের ৩রা ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের সন্তানকে হারিয়ে ছিলেন বাবা মা। একবছর পর গত ২৭ শে ফেব্রুয়ারি মায়ের কোল শূন্য করে চলে গেছে আর এক সন্তানও। প্রথম সন্তানের মৃত্যুর পর তার দেহদান করেছিলেন কলকাতার এস এস কে এম হাসপাতালে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রেও একই কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আমতার তাজপুরের দম্পতি বরুন পাল ও রূপা পাল। তাজপুরের রেশন ডিলার বরুন পাল ও তার স্ত্রী রূপা পালের দুই সন্তান ছিল। বড় ছেলের নাম অন্তরীণ ও ছোট ছেলের নাম অভ্যুদয়। দুজনেই ছোট থেকেই লিভার সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত ছিল। ২০১৯ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারি ৫ বছর বয়সে মৃত্যু হয় অভ্যুদয়ের।
পরিবারের সকলের সম্মতিক্রমে মৃতদেহ দান করা হয় কলকাতার এস এস কে এম হাসপাতালে। ঠিক একবছর পর গত ২৭শে ফেব্রুয়ারি মৃত্যু হয় ৮ বছরের অন্তরীণের। এবারেও পরিবারের সম্মতিক্রমে গত শুক্রবার অন্তরীণের মৃতদেহ দান করা হয় এস এস কে এম হাসপাতালে। পুত্র হারানোর শোক বুকে চেপে রেখে যাবতীয় সাক্ষর করেছেন দুই পুত্রকে অকালে হারানো বাবা মা। মৃতের বাবা বরুন পাল বলেন দুটি ছেলেই লিভার সংক্রান্ত অসুখে অকালে চলে গেলো। যাতে করে চিকিৎসাবিদ্যার ছাত্রদের কিছুটা উপকার হয় সেই ভেবেই বুকে অনেক কষ্ট ধরে রেখে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বরুন পালের বড়দা তপন পাল এলাকার দীর্ঘদিনের সমাজকর্মী। তিনি মরনোত্তর চক্ষুদান ও দেহদানের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করেন।
তিনি বলেন গত ফেব্রুয়ারি মাসের পঁচিশ তারিখ পরিবারের সকলকে নিয়ে ওড়িশার কটকে বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেদিনই অন্তরীণ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তৎক্ষণাৎ তাকে ওড়িশার কটক চিলড্রেন হাসপাতালে ভর্তি করি। সেদিনই বিকালে সেখানেই অন্তরীণের মৃত্যু হয়। তিনি বলেন ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক ভাইপো মারা গেলো আর এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে আর এক ভাইপো। তিনি বলেন আমি দীর্ঘদিন ধরেই মরনোত্তর চক্ষুদান ও দেহদান নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করি। তাই দুটি ক্ষেত্রেই মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে দেহদানের সিদ্ধান্ত নিই। অন্যদিকে এক বছরে দুই সন্তানকে হারিয়ে সারাক্ষণই নিঃশব্দে কেঁদে চলেছেন মা রূপা পাল। কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। তরুণ বাবু আরো জানান বাবা মারা যাওয়ার সময় তার চক্ষুদান করা হয়েছিল। চ্যারিটি বিগেনস এট হোম। ভবিষ্যতেও এইরকম পরিস্থিতি তৈরি হলে, আমরা একই সিদ্ধান্ত নেবো।