নিজস্ব প্রতিবেদক : গুরু-শিষ্যের বন্ধন অটুট। কালের নিয়মে গুরুর সংস্পর্শ ছেড়ে শিষ্যদের পাড়ি দিতে হয় নিজ ক্ষেত্রে। কিন্তু, গুরু থেকে যান শিষ্যের অন্তরের অন্তঃস্থলে। আর গুরুর দেখানো পথে সমাজ, দেশ ও জাতিকে আলোকিত করে তোলেন শিষ্যগণ। সেরকমই সাতজন সুযোগ্য শিষ্য সাত তারিখের সাত সকালে ‘গুরুদক্ষিণা’ নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন গুরুদের দ্বারে। এদক্ষিণা কোনো অর্থ নয়, দক্ষিণার ঝুলিতে ছিল একরাশ সম্মান, শ্রদ্ধা আর করোনা প্রতিষেধক কিট।
করোনা প্রতিষেধক কিটের মধ্যে ছিল ৫ লি: স্যানিটাইজার, একটি অক্সিমিটার, একটি থার্মোমিটার, একটি ১২ লি: অক্সিজেন ক্যান, কাজুবাদাম ও হ্যান্ডওয়াশ।রানা, অভিষেক, অনির্বাণ, শতদলরা গাড়ি ছুটিয়ে প্রথমেই পৌঁছে গিয়েছিল ব্যান্ডেলে অঙ্কের মাস্টারমশাই গোবর্ধনবাবুর বাড়িতে। তারপর একে একে সুবীর বাবু, গৌতম বাবু, আশিস বাবু, সুধীর বাবু, সোমনাথ বাবু আর সবশেষে সুমন বাবুর বাড়িতে।
দীর্ঘদিন বাদে প্রাণপ্রিয় ছাত্রদের কাছে পেয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়লেন গুরুরা। কেউ তাঁর এই সাত ছাত্রের জন্য লিখে দিলেন কবিতা, আবার কেউ নিজে হাতে ঘুগনি বানিয়ে খাওয়ালেন। আবার চন্দননগরের গৌতমবাবু আদর করে নিজের শহরের প্রসিদ্ধ জলভরা খাওয়ালেন।
এহেন ব্যতিক্রমী উদ্যোগের কান্ডারী তথা হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রানা মুখার্জি জানান, “আজ আমরা সবাই ছুটি নিয়ে এই কাজটি করলাম। লকডাউনের জেরে মাস্টারমশাইরাও সবাই বাড়িতেই ছিলেন। আর ওষুধপত্র দিতে যাচ্ছিলাম বলে লকডাউনে কোনো সমস্যাই হয়নি। প্রত্যেক মাস্টারমশাই আমাদের পেয়ে খুবই আপ্লুত। তাঁরা নিজেরাই যত্নআত্তি করে খাইয়েছেন। মনে হচ্ছিল আমরা এখনো স্কুলেই পড়ছি। অথচ দেখতে দেখতে ২৫ বছর পার হয়ে গেল। করোনা আবহে সামাজিক দূরত্ব বাড়লেও, আত্মিক নৈকট্য আজও অটুট।”
আজকের এই অনন্য কর্মসূচিতে রানা মুখার্জীর পাশাপাশি অংশ নিয়েছিলেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ‘শিক্ষারত্ন’ অনির্বান মুখার্জি, প্রখ্যাত উকিল গঙ্গেশ মুখার্জি সহ মাহেশ শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম বিদ্যালয়ের ১৯৯৬ সালে মাধ্যমিক পাশ করা এই ব্যাচের আরও বেশ কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্ব। রানা মুখার্জির কথায়, “স্যারেদের জন্যই আজ আমরা সাফল্য পেয়েছি। ওনাদের সাথে দেখা হয়ে খুব ভালো লাগলো।” এই অভিনব উদ্যোগে কেবল সাত জন নন প্রায় ৬০ জন ছাত্র প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত বলে তিনি জানান। দীর্ঘদিন পর পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের সান্নিধ্য পেয়ে স্বভাবতই খুশি এই সুযোগ্য প্রাক্তনীরা। এই স্বর্ণালী মুহুর্তগুলো ছেড়ে আসতে কারুরই মন চায়না। কিন্তু, সময় যে প্রবহমান! তাই আবারও এরকম একটি স্বর্ণময় মুহূর্তের প্রতীক্ষায় থাকলেন শতদল, কৌশিক, অভিষেকরা।