পার্থ প্রতিম চট্টোপাধ্যায়: “মরিতে চাইনা আমি সুন্দর ভুবনে” — কবিগুরুর কবিতার এই লাইনের তাৎপর্য অপরিসীম। মানুষ মরতে চায় না, যেতে চায় না এই সুন্দর ভুবন ছেড়ে অন্যলোকের দিকে। এই সুন্দরতা সে আরও বেশি করে উপলব্ধি করে বদ্ধ ঘরের জানলা খুলে বাইরের দিকে চোখ মেললে। পথের টানেই মানুষ পথে বের হয় । বর্তমানকালে এই পথ পাগল মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। যা বৃদ্ধি ঘটিয়েছে পর্যটন শিল্পের। যদি কয়েক বছরের তথ্য পর্যালোচনা করা যায় তাহলে দেখা যাবে ভ্রমণপিপাসু মানুষের সংখ্যা এক লাফে বেড়েছে অনেকটা গত পাঁচ বছরের মধ্যে। বিভিন্ন কারণে ভ্রমণ মানুষের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে যেমন অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি, রাস্তাঘাটের উন্নতি, পরিবহন গাইড ইত্যাদি এছাড়াও রয়েছে সরকারের সহায়ক নীতি , ইহাদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ অবদানের জন্যই বেশি সংখ্যক মানুষ পথে বের হয়েছে। মানুষের পথে বের হওয়ার অংকটা যত বেড়েছে ততই বৃদ্ধি পেয়েছে এই পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন কোম্পানির মুনাফা।
আগামী দিনে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের সংখ্যাটা যে আরো বাড়বে তা বলার অবকাশ রাখে না। একটা সমীক্ষায় দেখা গেছে এই সংখ্যাটা আগামী পাঁচ বছরে প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং এই সেক্টর যে আগামী দিনে বিনিয়োগ কারীর কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্তমানে পর্যটন শিল্পের অবদান ভারতবর্ষের মোট জিডিপির প্রায় 2.8 শতাংশ এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে পর্যটন শিল্পের অবদান প্রায় 4.59 শতাংশ।
প্রশ্ন জাগে কেন এত আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে এই পর্যটন শিল্প? এর উত্তরে বলা যায়, প্রধান কারণ আপনার ভ্রমণ পিপাসু মন। আপনার মতই ভ্রমণ পিপাসু মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে ফলে এই পর্যটন শিল্প উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও এই বৃদ্ধি আরও ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা যায়। এছাড়াও যুক্ত হয়েছে Medical tourism এবং Religious Tourism। ভ্রমণ আজকের দিনে আর কেবল বিনোদনের মাধ্যমে নয় ইহা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে মানুষের ব্যস্ত জীবনে। রাস্তাঘাট রেলপথ এবং বিমান পরিষেবার উন্নতি পর্যটন শিল্পের ক্ষেত্রে সোনালী বার্তা বয়ে এনেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সরকারের অনুকূল নীতি। ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পর্যটন শিল্প যে কতটা জরুরি তা এ বছরের বাজেটেই বোঝা গেছে। পর্যটন ব্যবস্থা তথা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এ বছর বাজেটে সরকারের মন্ত্র হয়েছে “বুদ্ধম শরণম গচ্ছামি”।
বিভিন্নভাবে আপনিও ভারতবর্ষের পর্যটন শিল্পের সূর্যোদয়ের সঠিক সময়ে বিনিয়োগ করতে পারেন। বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানির ইনডেক্স ফান্ড বাজারে রয়েছে, আপনার বিনিয়োগের অভিজ্ঞতা যদি বেশি দিনের না হয় এই প্রথা অবলম্বন করাই সবচেয়ে শ্রেয়। এছাড়াও পর্যটন শিল্পের অনেক শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনি কোন পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কোন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবেন সেই ব্যাপারে আপনার বিনিয়োগ পরামর্শদাতার সাহায্য নিতে পারেন। সরাসরি share এ বিনিয়োগের জন্য আপনাকে D- Mat একাউন্ট অবশ্যই খুলতে হবে।
সামগ্রিক জাতীয় আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ আগামী দিনে আসবে এই পর্যটন শিল্প থেকে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞদের মতে এই পর্যটন শিল্প আগামী দিনে হতে চলেছে বিনিয়োগের মহাকুম্ভ। আপনিও এই বিনিয়োগের মহা কুম্ভে পূর্ণ স্নান করে আপনার বিনিয়োগকে দিতে পারেন উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সন্ধান।
[লেখক বিশিষ্ট বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ]