নিজস্ব সংবাদদাতা : লকডাউনের প্রথম থেকেই বিভিন্ন ব্ল্যাডব্যাঙ্কগুলিতে রক্তের আকাল দেখা দিয়েছে। বহু মুমূর্ষু রোগীর পরিবার একবার এই ব্ল্যাডব্যাঙ্ক তো অন্য ব্যাঙ্কের দ্বারে এক ইউনিট রক্তের জন্য কাতর আহ্বান নিয়ে পৌঁছেছেন। অধিকাংশের ভাগ্যেই জোটেনি রক্ত। বেশ কিছুদিন আগেই রক্তের অভাবে থ্যালাসেমিয়া রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল উলুবেড়িয়ায়। ফের আরেকবার গ্রামীণ হাওড়ার সাঁকরাইলে রক্তের অভাবে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত ৭ বছরের শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ তুলল তার পরিবারের সদস্যরা। জানা গেছে, ওই শিশুর নাম সেখ কওসর আলি। তার ব্ল্যাডগ্রুপ বি-পজিটিভ। মৃত কওসর সাঁকরাইল থানার নলপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রঘুদেববাটী পশ্চিম গ্রামের বাসিন্দা।
কওসরের বাবা সেখ কামরুল জানান, “আমার ছেলে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ছিল। দীর্ঘ প্রায় ৬ বছর ধরে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে ওর চিকিৎসা চলছিল। গত ২০ শে জুলাই ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়লে ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। চিকিৎসক জানান বাচ্চা সাদা হয়ে গেছে। রক্তের প্রয়োজন।” কামরুলের অভিযোগ, “রক্তের জন্য ব্ল্যাডব্যাঙ্কে গেলে তাকে সেখানে জানানো হয় সেখানে ব্ল্যাড নেই। আমি যতক্ষণ না ডোনার দিতে পারব ততক্ষণ কোনো রক্ত দেওয়া হবে না। এমনকি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা টেস্ট পর্যন্তও করা হয়নি। তারপর একপ্রকার নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরে আসি।” তিনি বলেন, “তারপর রক্তদাতার সন্ধান শুরু করি। শেষপর্যন্ত যোগাযোগ করি ব্ল্যাডডোনার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে। গ্রুপটির পক্ষ থেকে সোমবার অর্থাৎ ২৫ তারিখ ডোনার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু, তার মাঝেই সবশেষ।”
কামরুল জানান, “গত শনিবার বিকাল থেকে আমার বাচ্চার প্রবল পেটের যন্ত্রণা শুরু হয়। তারপর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ মারা যায়।” সন্তান হারানোর বেদনায় আচ্ছন্ন কামরুলের আক্ষেপ, “দিনমজুরি করে কোনোরকমে সংসার চলে। এই অবস্থায় টাকা দিয়ে পুত্রের চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য আমার নেই। রক্তের অভাবে ছেলেকে এভাবে চলে যেতে হবে কখনো ভাবিনি।” বিনা চিকিৎসার অভিযোগে ইতিমধ্যেই রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী দারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সাঁকরাইলের কামরুল। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁর আবেদন, “কোনো বাবাকেই যেন এভাবে বিনা চিকিৎসায় সন্তান হারানোর বেদনা অনুভব করতে না হয় তার জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিক সরকার।” ব্ল্যাড ডোনার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের অন্যতম কর্তা
রেজাউল করিম জানান, “শিশুটিকে আগেও বেশ কয়েকবার আমাদের পক্ষ থেকে রক্তের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে এবার যখন জানতে পারলাম তখন সবশেষ।” তাঁর অভিযোগ, “উলুবেড়িয়া সুপার স্পেশালিষ্ট হসপিটালের ব্লাড ব্যাঙ্কে কমপোনেন্ট সেপারেটর মেসিন নেই, ফলে হোল ব্লাড দিয়ে থ্যালাসেমিয়া বাচ্চাদের চিকিৎসা চলছে যা ক্ষতিকর।” এর পাশাপাশি, থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের স্বার্থে আরও বেশি করে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করুক হাসপাতালের ব্ল্যাডব্যাঙ্ক চান সমাজকর্মী রেজাউল করিম।