নিজস্ব সংবাদদাতা : সম্পূর্ণ প্যান্ডেল পুড়ে যাওয়া সঙ্গে প্রতিমা। সেখান থেকে রাতারাতি প্রতিমা তৈরি করে ফের পুজো করা। এরকম ঘটনার কথা জানা যায় উত্তর কলকাতার বিখ্যাত কুমোরটুলি সার্বজনীনের দুর্গাপুজোর ইতিহাস খুঁড়লে। এবার খানিকটা সেরকমই ঘটনা ঘটল চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয়।
করোনা আবহে দাঁড়িয়ে চতুর্থী পর্যন্ত ঠিক ছিল ঘট পুজোর মাধ্যমেই এবার জগদ্ধাত্রী পুজো অনুষ্ঠিত হবে। হঠাৎ ভাবনায় পরিবর্তন। রাতারাতি ঠাকুর বানিয়ে একপ্রকার চমক দিল হুগলীর চন্দননগর বাউরিপাড়া শীতলাতলার একটি পুজো কমিটি।
জানা গেছে, চতুর্থী অব্ধি ঠিক ছিল এবার মূর্তিপুজো না করে শুধুমাত্র ঘটপুজো হবে। কিন্তু পঞ্চমীর সকালে হঠাৎ ঠিক হয় প্রতিবারের মতো এবারেও প্রতিমা পুজোই করা হবে। চন্দননগর স্টেশনের কাছে ফটকগোড়া মন্দিরের উল্টোদিকের গলি দিয়ে কয়েক পা গেলেই চন্দননগর বাউরিপাড়া শীতলাতলা। তাঁরাই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন। রাতারাতি সুবিশাল জগদ্ধাত্রী প্রতিমা গড়ে এখন তারাই প্রচারের শীর্ষে বলা যেতেই পারে।
পুজো কমিটি সূত্রে জানা গেছে, একদম শেষবেলায় প্রতিমা নির্মাণ করে পুজোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সময়মতো প্রতিমার কাজ শেষ হবে কিনা তা নিয়ে অনেকের সন্দেহ ছিল। শিল্পী মহাদেব পাল ও তাঁর সঙ্গীরা এই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন। উদ্যোক্তাদের কথায়, “চন্দননগরের জগৎবিখ্যাত জগদ্ধাত্রী পুজোর ইতিহাসে এটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা হয়ে রইল। এরজন্য শিল্পীর কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।”
সম্পূর্ণ প্যান্ডেল পুড়ে যাওয়া সঙ্গে প্রতিমা। সেখান থেকে রাতারাতি প্রতিমা তৈরি করে ফের পুজো করা। এরকম বিরল ঘটনার কথা জানা যায় উত্তর কলকাতার বিখ্যাত কুমোরটুলি সার্বজনীনের দুর্গাপুজোর ইতিহাস খুঁড়লে। জানা যায়, সালটা ১৯৩৮। সেবার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু এই পুজোর সভাপতির দায়িত্বে। বিপত্তি ঘটে পঞ্চমীর রাতে। কুমারটুলিতে গোপেশ্বর পালের তৈরি একচালা প্রতিমায় হঠাৎ আগুন লেগে যায়। পরের দিন দেবীর বোধন। রাতারাতি প্রতিমা তৈরি হবে কীভাবে? জি.পাল যান সুভাষচন্দ্রের বাড়িতে।
নেতাজি বলেন, একচালা প্রতিমার বদলে আলাদা করে মা দুর্গা, লক্ষ্মী, কার্তিক, গনেশ, সরস্বতী তৈরি করতে। এতে প্রতিমা তৈরিতে সময় কম লাগবে। কারণ একজন শিল্পীর উপর চাপ পড়বে না। জি.পাল একটা গড়বেন, বাকি মূর্তি গড়বেন তাঁর সহযোগীরা। এক রাতেই রাতারাতি তৈরি হল পাঁচ চালা দুর্গামূর্তি। সঙ্গে একচালার ঐতিহ্য ভেঙে প্রথমবার পাঁচ চালায় আলাদা আলাদা ভাবে হাজির মা দুর্গা ও তাঁর পরিবার। অনেক সমালোচনা হয়েছিল এই শিল্পের কিন্তু তা নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছিল। এমন ভাবেই এখন দুর্গা ও তাঁর পরিবারকে দেখা যায় বেশিরভাগ মণ্ডপে। সেই গোপেশ্বরই যেন হয়ে উঠলেন মহাদেব পাল।