নিজস্ব সংবাদদাতা : একশো দিনের কাজের প্রকল্পের মাধ্যমে জাপানি মিয়াওকি পদ্ধতিতে জঙ্গল তৈরির কর্মশালা শুরু হল শ্যামপুরের শিবগঞ্জে। আগামী দশদিন ধরে চলবে এই কর্মশালা। বৃহস্পতিবার কর্মশালার প্রথম দিনে পশ্চিমবঙ্গের ১৩ টি জেলার সরকারি আধিকারিকরা এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রাম উন্নয়ন দফতরের কমিশনার দিব্যেন্দু সরকার, হাওড়া জেলা শাসক মুক্তা আর্য, উলুবেড়িয়া মহকুমা শাসক তুষার সিংলা সহ অন্যান্য প্রশাসনিক কর্তা ব্যক্তিরা ।
জানা গেছে প্রখ্যাত জাপানি উদ্ভিদবিদ আকিরা মিয়াওকির উদ্ভাবিত পদ্ধতিকে অনুসরণ করে জঙ্গল তৈরির ভাবনা শুরু করে রাজ্য সরকার। ঠিক হয় হাওড়ার শ্যামপুর শিবগঞ্জে এই পদ্ধতিতে গাছ লাগানো শুরু হবে। এবং এই বিশেষ পদ্ধতিতে গাছ লাগানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে সেখানে। সেই কারণে শ্যামপুরের ডিঙাখোলা সেক্টরের ভাগীরথী কো অপারেটিভ জয়েন্ট ফারমিং সোসাইটি লিমিটেডের ১০০০ স্কোয়ার মিটার জায়গা ঘিরে ফেলা হয়েছে তার জাল দিয়ে ।
সুইডিশ তরুনী গ্রেটা থুনবার্গের নাম অনুসারে এই প্রজেক্টটের নাম দেওয়া হয়েছে ” থুনবার্গ ফরেস্ট”। ১০০০ স্কোয়ার মিটার এই জায়গায় লাগানো হবে ৩৯ টি প্রজাতির গাছ। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পঞ্চায়েত ও গ্রাম উন্নয়ন দপ্তরের কমিশনার দিব্যেন্দু সরকার বলেন এটি একটি পাইলট প্রজেক্ট ।এই প্রজেক্ট আগামী দিনে দেশকে পথ দেখাবে। তিনি বলেন দেশে এই প্রথম একশ দিনের কাজকে ব্যবহার করে মিয়াওকি পদ্ধতিতে গাছ লাগানো হবে। তিনি জানান খুব অল্প বেড়ে উঠবে এই সমস্ত গাছ। এর ফলে এদিকে যেমন বাতাসে অক্সিজেনের পরিমান বাড়বে তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে এই জঙ্গল।
এখানে আপাতত রাজ্যের জেলার প্রতিনিধিরা হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের জেলা গুলিতে এই পদ্ধতিতে গাছ লাগাবেন। জানা গেছে কোনে বিদেশী গাছ নয় । বিভিন্ন দেশীয় গাছ লাগানো মিয়াওকি পদ্ধতিতে হাতে কলমে শিখবে সরকারী প্রতিনিধিরা। হাওড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, মালদা, উত্তর দিনাজপুর, পূর্ব বর্ধমান, দক্ষিণ ২৪ পরগনা মিলিয়ে মোট ১৩ জেলার ৩৬ জন প্রতিনিধি দশ দিন ধরে এই পদ্ধতি তে গাছ লাগানোর কাজ শিখবেন। মিয়াওকি পদ্ধতিতে গাছ লাগানোর পদ্ধতি শেখানোর জন্য “এফোরেস্ট ” নামে ব্যাঙ্গালোরের একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এফোরেস্টের প্রশিক্ষকদের একটি দল সেখানে উপস্থিত হয়েছেন ।
বৃহস্পতিবার প্রশিক্ষক দলটি শিবগঞ্জ উপস্থিত সরকারী প্রতিনিধিদের মিওয়াকি পদ্ধতি সম্পর্কে বিশদে বুঝিয়ে বলেন। পরে এদিন বিকালে মিয়াওকি পদ্ধতিতে গাছ লাগানোর জন্য কি ভাবে মাটি তৈরি করতে হবে তা করে দেখান এফোরেস্টের প্রশিক্ষক শুভেন্দু শর্মা । তিনি বলেন এই অল্প পরিমাণ জমিতে প্রায় ৩২৮০ টি গাছ বসানো হবে। এই গাছ গুলি বিগত সাত মাসের মধ্যে তিরিশ গুন বৃদ্ধি পাবে। একথায় খুব অল্প সময়ে জঙ্গলের চেহারা নেবে। তিনি বলেন পৃথিবীর নটি দেশে এই পদ্ধতিতে গাছ লাগিয়ে তারা সফল হয়েছেন।ভারতবর্ষের হিমাচল প্রদেশ থেকে শুরু করে রাজস্হান, গুরগাও তে মিয়াওকি পদ্ধতিতে গাছ লাগানো হয়েছে। জানা গেছে মিয়াওকি পদ্ধতির মাধ্যমে শিবগঞ্জে লাগানো হবে বহেরা, বেল,জাম,আম,হরিতুকি, বাবলা ,বট, পলাশ, খিরিশ, তাল, করমচা, মহুয়ার মতো দেশীয় গাছ রোপন করা হবে।এদিন হাওড়া জেলা শাসক মুক্তা আর্য বলেন এই পদ্ধতিতে জেলার বিভিন্ন গাছ লাগানো হবে। সবুজায়নের ক্ষেত্রে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।