নিজস্ব সংবাদদাতা : উঁচুতলার নেতাদের পর এবার দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন তৃণমূলের ব্লক স্তরের ‘দাপুটে’ নেতা। দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে এবার মুখ খুললেন গ্রামীণ হাওড়ার পাঁচলা ব্লকের অন্যতম ‘দাপুটে’ তৃণমূল নেতা তথা হাওড়া জেলা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য মোহিতলাল ঘাঁটি।
বৃহস্পতিবার মোহিতলাল ঘাঁটি সাংবাদিকদের জানান, “সুশীল অধিকারী, আমি সহ আরও দু-একজন মিলে পাঁচলার বুকে তৃণমূল দলটাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। কিন্তু দল যখন ক্ষমতায় এলো দেখা গেল যারা দলের কেউ নয় তারা সেদিন বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পেল। আর আমরা সেদিন বঞ্চিত হলাম। আজ পর্যন্ত দলের জন্য অনেক লড়াই করেছি। কিন্তু কোনোদিন ক্ষমতা ভোগ করিনি।”
তাঁর অভিযোগ, “যাঁরা আজ দলের ক্ষমতা ভোগ করছে তাঁরা দলের দুর্দিনে কেউ ছিলনা।আমরা সুদিনে দলে বঞ্চিতই থেকে গেছি।” উল্লেখ্য, পাঁচলার একটি আসন থেকেই ২০০৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে জেলা পরিষদে জয়লাভ করেন মোহিত। তিনি বলেন, “পরবর্তীকালে ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পাঁচলা থেকে লড়াই করবার জন্য আমায় দলনেত্রী নিজে প্রস্তুত হতে বলেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে দেখা গেছে বঞ্চিতই থেকে গেছি।”
নাম না করে পাঁচলার বর্তমান তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন মোহিত। তাঁর অভিযোগ, “২০১১ সালে দলের হয়ে পাঁচলা কেন্দ্রে যিনি টিকিট পেলেন তিনি দলের কেউ ছিলেন না। কংগ্রেসে থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। সুযোগ বুঝে তৃণমূলে এসে অর্থের বিনিময়ে প্রার্থীপদ দখল করেছেন।” তাঁর আক্ষেপ, “এমনকি ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দলের বিশ্বস্ত সৈনিক হিসাবে পাঁচলার বুকে লড়েছি। কিন্তু ২০১৮ সালে জেলা পরিষদের ভোটে আমায় টিকিট পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। আমার এক নিকটাত্মীয়কে টিকিট দিয়েও মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয়।”
তাঁর অভিযোগ, “তৎকালীন জেলা সভাপতি লক্ষ্মীরতন শুক্লা ও কো-অর্ডিনেটর রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে পাঁচলার ব্লক সভাপতি করতে চাইলেও সেখানেও অর্থের বিনিময়ে বিভিন্নভাবে উচ্চ নেতৃত্বের কাছে আমার বিরুদ্ধে অব্জেকশন দিয়ে আমায় ব্লক সভাপতি করতে দেওয়া হয়নি। আমি যাতে সঠিকভাবে দলের মধ্যে কাজ না করতে পারি সেই চক্রান্তই আমার বিরুদ্ধে বারেবারে করা হয়েছে।”
মোহিতলাল ঘাঁটির কথায়, “যে দল তৈরি করেছি, যে দলের জন্য দীর্ঘদিন লড়াই চালিয়েছি সেই দলে যোগ্য সম্মানটুকু পাইনি।” এদিন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় প্রসঙ্গেও মুখ খোলেন মোহিত। তিনি বলেন, “রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো একজন সুযোগ্য নেতৃত্ব যিনি মাত্র ক’দিনে সেচ দপ্তরে বিপুল পরিবর্তন এনেছিলেন তাঁকে হঠাৎই কম গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হল।”
এমনকি লক্ষ্মীরতন শুক্লাকে জেলা সভাপতি ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে কো-অর্ডিনেটর করা হলেও তাদের মিটিং করার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন পাঁচলার এই তৃণমূল নেতা। তিনি বলেন, “দলের মধ্যে অসম্মান নিয়ে এভাবে থাকা যায়না। মত জানাবার অনেক পথ আছে।” তাই মত জানাতে তিনি কি যোগ দিচ্ছেন গেরুয়া শিবিরে? — এব্যাপারে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “রাজনীতিতে থাকছি।” তবে তিনি বর্তমান দলেই থাকছেন নাকি অন্য দলে যাচ্ছেন তার উত্তর কিছুদিনের মধ্যেই পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।