ড.সৌরভ দোয়ারী : বিঘার পর বিঘা জমিতে দাউ দাউ করে জ্বলছে খড়। আর তা-ই উস্কে দিচ্ছে দিল্লী দূষণের ভয়াবহ স্মৃতি। দিল্লীর দূষণ থেকে কি কোনো শিক্ষাই নেবেনা বঙ্গবাসী? — গ্রামীণ হাওড়ার আমতা-২, উদয়নারায়ণপুর সহ বিভিন্ন ব্লকের বিঘার পর বিঘা ধান জমিতে নাড়াপোড়ানোর নিত্যছবি এই প্রশ্নই তুলে দিচ্ছে। সরকারী বিধিনিষেধ সত্ত্বেও গ্রামীণ হাওড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে অবাধে চলছে নাড়া (ধান গাছ কেটে নেওয়ার পর অবশিষ্টাংশ) পোড়ানোর কাজ। এর জেরে শীতের শুরুতেই ব্যাপক বায়ুদূষণের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাজ্যের কৃষকদের মধ্যে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিতে গত ৪ ঠা নভেম্বর সারা রাজ্যবাপী কৃষিদপ্তরের পক্ষ থেকে নাড়াপোড়ানো বিরোধী দিবস পালন করা হয়েছে। তবু হুঁশ ফেরেনি বহু কৃষকের। প্রশাসনের নিয়মকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়েই চলছে এই কাজ। দিনের বেলা প্রশাসনের নজর এড়ানোর জন্য রাতের অন্ধকারে জমিতে নাড়াপোড়ানোর কাজ চলছে। আর তাতেই বিপদের আশঙ্কা দ্বিগুণ বাড়ছে। রাতের অন্ধকারে নজরদারীর অভাবে এই আগুন পার্শ্ববর্তী মাঠে এমনকি গৃহস্থের বাড়িতেও চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। সম্প্রতি সেরকমই একটি ঘটনা ঘটেছে পাশ্ববর্তী হুগলী জেলাতে।
বিভিন্ন কৃষিবিজ্ঞানী, গবেষকদের কাছ থেকে জানা যাচ্ছে, নাড়া পোড়ানোর জন্য চাষের জমির উপরের মাটির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। উপকারী জীবাণু, কীটপতঙ্গ, কেঁচো জাতীয় প্রাণীদেরও মৃত্যু ঘটছে। যার জেরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চাষের ক্ষতি হচ্ছে। এমনকি ফসলের উপযোগী বিভিন্ন মৌলেরও বিনাশ ঘটছে এতে। তবুও এই খারাপ অভ্যাস থেকে কিছুতেই বিরত করা যাচ্ছে না কৃষকদের। বহু কৃষকের ধারণা, নাড়া পোড়ানোর ফলে উটপন্ন ছাই চাষের জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। তবে এই ধারণা উড়িয়েই দিয়েছেন কৃষিবিদরা। তাঁদের মতে, এতে উপকারের থেকে ক্ষতিই বেশি হয়। তবে অভিজ্ঞ চাষীদের সাথে কথা বলে বোঝা গেছে, সম্প্রতি বাড়ছে এই ট্রেন্ড। বছর দশেক আগেও এই ট্রেন্ড এত বেশী ছিল না।
কৃষকদের মতে, নাড়া জাতীয় জিনিসের ব্যবহার কমে যাওয়ায় চাষের জমিতে নাড়াপোড়ানোর ট্রেন্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগে অনেক মানুষ এই নাড়া জোগাড় করত জ্বালানীর জন্য। এখন জ্বালানী হিসাবে, গবাদী পশুর খাবার হিসাবে ব্যবহার কমে যাওয়ার জন্যই এর পুড়িয়ে ফেলার প্রবণতা বাড়ছে বলে প্রবীণ কৃষকরা দাবী করেছেন। তাঁদের মতে, হারভেস্টারের সাহায্যে ধান কাটায় নাড়ার পরিমাণ বাড়ায় অনেকের কাছেই টাকা ও সময় বাঁচানোর জন্য পুড়িয়ে দেওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকছে না।
জমিতে নাড়াপোড়া রোধ করতে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। প্রশাসনের তরফে ভর্তুকি সহ চাষীদের হারভেস্টার দেওয়ার সাথে রোটাভেটার নেওয়া আবশ্যিক করা হয়েছে। এর ফলে নাড়া বা ধানগাছের অবশিষ্টাংশ এক জায়গায় বেঁধে বা গুছিয়ে রাখা যায়। নাড়ার বিকল্প ব্যবহারের ব্যবস্থা করার কথাও ভাবছে সরকার। তারজন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ শিবিরের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।