বিশেষ প্রতিবেদন : পূর্বে বহু বনেদী বাড়ির পুজোর সূচনা হত কামান দেগে। তবে কালের নিয়মে এখন সেসব রীতি প্রায় হারিয়ে গেছে বললেই চলে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে কামান না দাগলেও মন্ডপে থাকছে বিশেষ কামানের ব্যবস্থা। তবে এ কামান গোলাবারুদ দাগার নয়, এ কামান স্যানিটাইজেশনের। কোনো রাজবাড়ি বা বনেদিবাড়িতে নয়, খোদ কোলকাতার বারোয়ারি পুজোগুলোর মধ্যে অন্যতম মুদিয়ালি ক্লাবেই এই আয়োজন।
এবার বেশিরভাগ পুজোই আড়ম্বরপূর্ণ ভাবনা থেকে সরে গিয়ে প্রাধান্য দিচ্ছে সামাজিক দায়বদ্ধতাকে। বর্তমান পরিস্থিতির কথা ভেবে মুদিয়ালি ক্লাবেরও এবারের থিম ‘দায়’। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই তাঁদের এই ভাবনা। অনলাইনে অঞ্জলি হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যাবে। আবার স্যানিটাইজিং কামান দিয়ে তাঁরা স্যানিটাইজ করাতেও চাইছে। ঢাকে কাঠি পড়ে গেছে। ইতিমধ্যেই বেশিরভাগ পুজো প্যান্ডেল গুলো সেরে ফেলেছে খুঁটিপুজোর কাজ। কারণ, হয়ে গিয়েছে মহালয়া। যদিও এবার মহালয়ার প্রায় এক মাস পর পুজো। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে কাউন্টডাউন। তবে চলতি বছর পুজো নিয়ে উদ্যোক্তাদের কপালেও পড়েছিল চিন্তার ভাঁজ। সেই চিন্তার ভাঁজ কপালে রেখেই পুজো করছে ক্লাবগুলি। একই ভাবেই কাজ করছে মুদিয়ালিও।
মুদিয়ালি পুজো কমিটির এক কর্তা জানান, “আমাদের ভোগ এখানে সবাই বসে খায়। তবে এবারে ব্যবস্থা করেছি ছোট বক্সের মাধ্যমে সেইগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার। ঘরে বসেই মানুষ যাতে পুজোর আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, আমরা সেই চেষ্টা চালাচ্ছি। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে যে পুজো দেখানো হয়, তেমন পুজো-পরিক্রমা নয়। এটা একেবারে অন্য আঙ্গিকে দেখানো হবে। প্রাথমিকভাবে ঠিক করেছি, কলাবউ স্নান থেকে শুরু করে মহাষ্টমীর অঞ্জলি, বা সন্ধিপুজোর মতো সব আচার-অনুষ্ঠানগুলিকে দেখানো হবে অনলাইনে। সরাসরি সম্প্রচারিত হবে চণ্ডীপাঠ থেকে আরতি। সেইসঙ্গে মণ্ডপসজ্জা, আলোকসজ্জা তো আছেই।”
একইসঙ্গে তাঁরা জানিয়েছেন, “করোনা ক্যানন বসাচ্ছি আমরা। এটি প্রায় ১০০০ বর্গফুট এলাকায় করোনা ভাইরাস ধ্বংস করতে সক্ষম। কামানের মতো দেখতে এই মেশিন হাইপারচার্জ হাই ভেলোসিটি ইলেক্ট্রন তৈরি করে এবং সেটি এস প্রোটিনের সঙ্গে নেগেটিভ শক্তি হিসাবে বিক্রিয়া করে জীবাণু ধ্বংস করবে। পুলিশের পক্ষে সমস্ত পুজো কমিটিকেই কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে করোনা মোকাবিলায় কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সেই ব্যবস্থা ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ থেকেই এই কাজ করছি আমরা। এবারের পুজো তো দায়বদ্ধতার।” আগে স্যানিটাইজার টানেল বসানোর চিন্তা ভাবনা করা হয়েছিল। কিন্তু তা করা যায়নি, কারণ সুপ্রিম কোর্টের ‘না’ রয়েছে এতে। কিন্তু দর্শকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার মাথায় রেখে স্যানিটাইজার কামান বসাচ্ছে মুদিয়ালি পুজো কমিটি। পাশাপাশি, যারা কাজ করবেন তাঁদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে চাইছে দক্ষিণ কলকাতার এই হেভিওয়েট পুজো কমিটি।