নিজস্ব সংবাদদাতা : দুর্গাপুজো আর ৩ মাসও বাকি নেই। এই সময়ে গ্রামীণ হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর ব্লকের সিংটির ঘরে ঘরে চরম ব্যস্ততা থাকে। তবে এবার সেই ব্যস্ততার ছবিটা হঠাৎই কোথাও যেন উধাও হয়ে গেছে। দীর্ঘ লকডাউনের জেরে চরম সমস্যার সম্মুখীন সিংটির কয়েক’শো তাঁত শিল্পী পরিবার। লকডাউনের কারণে শিল্পীরা বিক্রি করতে পারছেন না তাঁদের তৈরি করা তাঁতের কাপড় সহ বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী।
আগে থেকে তৈরি থাকা সামগ্রী কম দামে দিলেও নিতে চাইছেনা মহাজনরা। এর ফলে চরম আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন এই কয়েক’শো পরিবার। কোনোরকমে রেশনের চালে দু’বেলা অন্ন সংস্থানটুকু হচ্ছে তাঁদের। তাঁতশিল্পীদের দাবি, কাজের চাহিদা না থাকায় বহু শিল্পী তাঁতের কাজ ছেড়ে অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছেন।
শিল্পীরা জানিয়েছেন, “অন্যান্য বছর পুজোর সময় তাঁতের কাপড়ের চাহিদা থাকে। কিন্তু, চলতি বছরে লক ডাউনের কারণে চাহিদা প্রায় শূন্য। হাটে মাল পৌঁছাতে পারছেন না তারা। কেউ কেউ কোন প্রকারে হাটে মাল নিয়ে পৌঁছালেও বাজারে পাইকাররা সেই সমস্ত মাল কিনতে চাইছেন না। ফলত চরম আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে পড়েছেন তারা।” তাদের দাবি, ফি বছরই বন্যায় ভাসে উদয়নারায়ণপুরের এই এলাকা। চলতি বছরেও বন্যার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। বন্যা হলে তাদের চলতি বছরে না খেতে পেয়ে মরতে হবে বলেও তারা দাবি করেন।
তারা জানান, উদয়নারায়ণপুরে বন্যার সময় এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা সরকারি সাহায্য পেলেও তাঁতশিল্পীরা কোনরকম সাহায্য পাননা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তাদের কাতর আবেদন তিনি যেন তাঁত শিল্পীদের প্রতি একটু সহানুভূতির নজর দেন। নচেৎ তাদের না খেতে পেয়ে মরতে হবে না হলে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হবে। তাদের দাবি বিগত দিনে এই এলাকায় প্রায় ৬৫০ টি পরিবার তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিল। সেই সংখ্যাটা কমে দাঁড়িয়েছিল ২৫০ তে।
লকডাউনের কারণে সেই সংখ্যা আরো নেমে গিয়ে খুব বেশি হলে ১৫০ দাঁড়িয়েছে। তাঁত শিল্পীরা জানাচ্ছেন আগে থেকে তৈরি করা বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ বাড়িতেই পড়ে রয়েছে কোনভাবেই সেগুলি তারা বিক্রি করতে পারছেন না। আগে সারাদিন কাজ করে ভাল মজুরি পেলেও এখন মজুরি সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কাপড় প্রতি ৭০ টাকায়। তাদের দাবি অবিলম্বে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করুন এবং তাঁত শিল্পীদের এই দুর্দশা হাত থেকে মুক্তি দেন।
উদয়নারায়ণপুরের হরালীর বাসিন্দা তাঁত শিল্পী জয়ন্তী মাইতি বলেন। এখন কাপড় তৈরি বন্ধ। কারন কাপড় তৈরি করে তা বিক্রি করা যাচ্ছে না। পাইকাররা এখন কাপড় কিনতে চাইছে না। তারা বলছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দেখা যাবে। আর এক তাঁত শিল্পী প্রেমানন্দ জানা বলেন, “লক ডাউন পরিস্থিতিতে রেশনে দেওয়া চাল, ডাল খেয়ে কোনো রকমে দু’মুটো জুটছে ঠিকই, তবে সংসারের আর অন্য চাহিদা মিটছে না।” শিল্পীরা চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখুক।