নিজস্ব সংবাদদাতা : করোনার জেরে থমকে স্কুল-কলেজের পঠনপাঠন। কিন্তু ইতিমধ্যেই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ফল প্রকাশিত হয়েছে। পড়াশোনার প্রস্তুতিও শুরু করেছে অধিকাংশ পড়ুয়া। আর পাঁচটা পড়ুয়ার মতোই আকাশ, সইদুল, কৃষ্ণেন্দু, দীপাংশুরা মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে নতুন শ্রেণীতে উঠেছে।শেষ পরীক্ষায় ওদের কেউ পেয়েছে ৯০ শতাংশ নাম্বার আবার কেউ পেয়েছে ৭৫ শতাংশ নাম্বার। তবে ওদের জীবনের লড়াইটা আর পাঁচটা পড়ুয়ার থেকে একটু অন্য রকমের। কারুর বাবা নেই, মা সাফাইকর্মীর কাজ করে সংসার চালান, কারুর বাড়িতে অর্থাভাবে জ্বলেনি বিদ্যুতের আলো, আবার কেউ নিজের পড়াশোনা চালানোর পাশাপাশি সংসারের হাল নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে। তবুও শিক্ষার পবিত্র আলোয় নিজেদের আলোকিত করতে চালিয়ে যাচ্ছে অদম্য লড়াই।
গ্রামীণ হাওড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের এমনই বেশ কিছু আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল পড়ুয়ার লড়াইয়ে সাথী হয়ে এগিয়ে এসেছে আমতার উদংয়ের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্ন দেখার উজান গাঙ’। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির পক্ষ থেকে শিক্ষায় স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আমতার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির পক্ষ থেকে দুঃস্থ পড়ুয়াদের হাতে সেইসব একাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান ও কলা বিভাগের বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক, খাতা ও অন্যান্য শিক্ষাসামগ্রী তুলে দেওয়া হচ্ছে।সংস্থার সম্পাদক তাপস পাল জানান, “শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সূত্র মারফত তাঁদের প্রয়োজনীয় বই ও শিক্ষাসামগ্রীর আবেদন জানাচ্ছেন।আমাদের সংস্থার সদস্য-সদস্যারা সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংশ্লিষ্ট পড়ুয়াদের বাড়িতে গিয়ে তথ্য অনুসন্ধান ও যাচাইয়ের কাজ চালাচ্ছেন।”
সেই সংগৃহীত তথ্যের উপর ভিত্তি করেই ছাত্রছাত্রীর বাড়িতে তার প্রয়োজনীয় পাঠ্যবই, বিভিন্ন শিক্ষাসামগ্রী নিয়ে গিয়ে হাজির হচ্ছেন গ্রামীণ হাওড়া জুড়ে কাজ করা এই সংস্থাটির প্রতিনিধিরা। এমনকি বেশ কিছু ছাত্রছাত্রীর জন্য ফ্রি-কোচিংয়েরও ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে তাপস বাবু জানান। তবে, করোনার জেরে আপাতত সেগুলি স্থগিত রাখা হয়েছে। সংস্থার সহ-সভাপতি অরুণ খাঁ জানান, “এখন আপাতত ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ করা হয়েছে। সেখানেই ওদের মোটিভেট করার পাশাপাশি পড়াশোনা শুরু করা হয়েছে।” উল্লেখ্য, উলুবেড়িয়ার হীরাপুরের সেখ সইদুল আলমের, নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসারে তার পরিবারের পক্ষে পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যাওয়া খুব সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
কিন্তু এই সংস্থাই তার পড়াশোনার সমস্ত বন্দোবস্ত করেছে। সংস্থা সূত্রে খবর, এবার ইতিমধ্যেই তাদের পক্ষ থেকে গ্রামীণ হাওড়ার বিভিন্ন ব্লকের প্রায় ১৮ জন পড়ুয়ার হাতে তাদের প্রয়োজনীয় বই, খাতা, পেন, সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর সহ বিভিন্ন শিক্ষা সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহখানেকের মধ্যে আরও প্রায় ৭-৮ জন বিদ্যার্থীকে বই তুলে দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, গ্রামীণ হাওড়ার এই অগ্রণী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গত দু’বছর ধরে জেলার প্রান্তিক পড়ুয়াদের নিয়ে কাজ করছে। এহেন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। শিক্ষক রাকেশ মন্ডলের কথায়, “বহু পড়ুয়ার চোখে স্বপ্ন থাকে অনেক বড়ো হওয়ার। কিন্তু, আর্থিক অনটনের কারণে বহু মেধাই হারিয়ে যায় অতল গভীরে। তেমনই পড়ুয়াদের স্বপ্ন দেখাতে ও সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে এই সংস্থার প্রয়াস সত্যিই অনবদ্য।”