নিজস্ব সংবাদদাতা : মুর্শিদা বেগম, বাবার নাম কালীপদ দাস। রমা দাস, বাবার নাম শেখ রফিকুল হাসান। পলাশ কর, বাবার নাম শেখ সইদুল। কারুর ছেলের সংখ্যা ৯ আবার কারুর বা ৮। তাদের ছেলেমেয়েরা আবার ভিন্ন ধর্মাবলম্বী।
নাহ, বিষয়টি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কোনো নজির নয়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যখন আম্ফান ত্রাণ নিয়ে দলবাজি না করে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলছেন সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে এরকমই ‘ভুতুড়ে’ কান্ড দেখা গেল গ্রামীণ হাওড়ার উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায়। উলুবেড়িয়া-১ ব্লকে আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরিতে দুর্নীতির অভিযোগে সরব বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে সাধারণ গ্রামবাসীরাও।
উল্লেখ্য, আম্ফানের তান্ডবে উলুবেড়িয়ার বিভিন্ন এলাকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙেছে কাঁচাবাড়ি, উপড়েছে পোস্টার,ছোটোবড়ো অজস্র গাছ। পাশাপাশি, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পানের বরোজ। আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি সাহায্য দেওয়ার কাজ শুরু হয় স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে। ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার তালিকা নিয়েই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, মুসাপুর, কালীনগর সহ উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের বিভিন্ন অঞ্চলেই আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় এলাকার তৃণমূল সদস্যরা নিজেদের পছন্দ মতো লোকের নাম দিয়েছেন।
আবার, বহিরা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্যের বিরুদ্ধেও অভিযোগের আঙুল উঠেছে। এই সমস্ত অঞ্চলের বহু মানুষের অভিযোগ, তালিকায় নাম থাকা বহু লোকেরই স্বচ্ছল অবস্থা। আম্ফানে বিন্দুমাত্র ক্ষতি হয়নি তাদের। এমনকি চার তলা বড়ো বাড়ি থাকার পরেও আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় তাদের নাম স্থান করে নিয়েছে।
আবার কোনো কোনো পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে নিজের মা’য়ের নামে দু’বার করে ক্ষতিপূরণ নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। অবশ্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে কৈফিয়ৎ তলবে পিছিয়ে নেই সাধারণ মানুষও। জানা গেছে, ইতিমধ্যেই তারা মুসাপুর গ্রামের তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য কবিতা গোরের বাড়ির সামনে অবস্থান করে। আবার বেনিয়মের অভিযোগে হাটগাছা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান প্রদীপ পালকে তার দোকানে দীর্ঘক্ষণ আটকে রেখে কৈফিয়ৎ তলব করেন বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা।
পাশাপাশি, এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে হাওড়া জেলা কৃষক সমিতির সদস্যরাও। হাওড়া জেলা কৃষক সমিতির নেতা গৌতম পুরকাইত বলেন, “আমরা সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে দুর্নীতির মূলচ্ছেদ করেই ছাড়বো। বিডিও অফিসে ডেপুটেশন হবে। যতক্ষন না আমরা আম্ফানের দুর্নীতির টাকা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের হাতে তুলে দিতে পারছি ততক্ষন আমাদের এই লড়াই জারি থাকবে।”