নিজস্ব সংবাদদাতা : দীর্ঘ লকডাউন তার সাথে আম্ফানের ঝাপটা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই বাংলার কৃষকমহলের কাছে নতুন আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছিল পঙ্গপাল। তবে সৌভাগ্যক্রমে পঙ্গপালের হানা দেখতে হয়নি বঙ্গবাসীকে। কিন্তু, ফেরালের আতঙ্কে দিন গুনছেন গ্রামীণ হাওড়ার আমতা-১, আমতা-২, বাগনান-১ ও ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের চাষিরা। রাতের অন্ধকারে অতর্কিতেই চাষের ক্ষেতে হানা দিচ্ছে ফেরালের পাল। মুহুর্তের মধ্যে ছারখার করে দিচ্ছে বহু শ্রমের ফসলকে। এদের হানায় কার্যত ঘুম উড়েছে কৃষকদের। প্রাণী বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ফেরাল আদতে একপ্রকার বন্য শূকর। প্রাণীবিদ্যার ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায় বহু বছর আগে উলুবেড়িয়া ও তার সংলগ্ন বেশ কয়েকটি অঞ্চলে বন্য শূকরের আবির্ভাব। তবে তারপর বহুদিন আর এই অঞ্চলে বন্য শূকরের দেখা মেলেনি।
বিশেষজ্ঞদের অনুমান, মাঝেমধ্যেই পোষ্য শূকরের পাল নিয়ে গ্রামীণ হাওড়ার বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে যাওয়া হয়। তাদের মধ্যে থেকেই দলছুট হয়ে এই ফেরালের আবির্ভাব। তবে ফেরাল যে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে তা মেনে নিয়েছেন তাঁরা। বিশিষ্ট পরিবেশবিদ ও জীববিদ্যার গবেষক সৌরভ দোয়ারীর কথায়, “এই প্রাণীরা দিনে মূলত খড়িবনে লুকিয়ে থাকে। তবে রাত হলেই পালে বেড়িয়ে পড়ে। খড়িবন সংলগ্ন কৃষিক্ষেতে এরা বেশি অত্যাচার চালায়। যার জেরে কার্যত লন্ডভন্ড হয়ে যায় কৃষিক্ষেত।” তিনি আরও বলেন, “গ্রামীণ হাওড়ার আমতা, বাগনান এলাকায় খড়িবনের পরিমাণ বেশি। তাই এখানে এই প্রাণীর আনাগোনাও অনেক বেশি। কৃষিক্ষেতের পাশাপাশি পানবরজেও এরা ব্যাপক ক্ষতি করে।”
কৃষকদের অভিযোগ, একাধিকবার কৃষিদপ্তর ও বনদপ্তরকে জানিয়েও কোনোরূপ সুরাহা মেলেনি। তাই নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে কখনো তারের বেড়া দিয়ে কিমবা পরিখা কেটে নিজক্ষেত বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন চাষীরা। আর তাতেই প্রাণ যাচ্ছে এই প্রাণীদের। জানা গেছে, গতকালই আমতা-২ ব্লকের সারদা গ্রামে চাষের ক্ষেতে কাটা এরকমই এক পরিখায় পড়ে মৃত্যু হয়েছে এই বন্য শূকরের। তবে এই ঘটনা নতুন না। মাস তিনেক আগেও একটি ফেরাল এভাবেই প্রাণ হারিয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা চান, বাঁচুক মানুষ, বাঁচুক তাঁদের জীবিকা, বাঁচুক বন্যপ্রাণ। তাই নাসিম খানের মতো গ্রামবাসীরা বন্য শূকরের হাত থেকে ফসল রক্ষার্থে দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।