নিজস্ব সংবাদদাতা : বছরশেষে নীলষষ্ঠীর রাত মানেই রাতজাগা। নীলকন্ঠের সাথে নীলাবতীর বিয়ে উপলক্ষ্যে রাত জাগেন নীলসন্ন্যাসী সহ গ্রামীণ হাওড়ার প্রত্যন্ত গ্রামের বহু মানুষ। তাঁদের জাগিয়ে রাখতে থাকে এলাহী আয়োজন। চলে উদ্দাম নৃত্য। থাকে মেলা, বিভিন্ন লোক উৎসবের আয়োজন। কাঁসর আর ঢোলের তালে মুখরিত হয়ে ওঠে শ্যামপুর, উলুবেড়িয়া, বাগনান, বাইনান সহ গ্রামীণ হাওড়ার বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রাম। আর এই উদ্দাম নৃত্য ও গাজন উৎসবের টানেই নীলের বিয়ের রাতে জেলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে ভিড় জমান রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের বহু উৎসুক মানুষ।
সারাবছর ধরে চৈত্রসংক্রান্তির এই বিশেষ উৎসবের জন্য বহু মানুষ অপেক্ষা করে থাকেন। কারও জিভ বিদ্ধ হয় লোহার ফলায়, কেউবা শুয়ে থাকেন পেরেক বসানো পাটাতনে। এই দৃশ্য দেখে অনেকেরই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসে। তবুও শিবের গাজন উপলক্ষে ভক্তদের এহেন কলাকৌশল দেখতে প্রতি বছর বহু মানুষ ভিড় জমান। পাশাপাশি, থাকে হাওড়া জেলার বিশেষ লোকনৃত্য কালিকাপাতাড়ি বা কালকেপাতাড়ি। সময়ের সাথে সাথে অবলুপ্তির পথে এগিয়ে চললেও আজও শিবচতুর্দশী ও নীলষষ্ঠীর রাতে বাগনানের জোঁকা, শ্যামপুর, উলুবেড়িয়ার বিভিন্ন গ্রামে এই লোকনৃত্য অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানত, পুরাণ ও মহাকাব্যের ভিত্তিতে মুখে মুখে রচিত হয় এক একটি টুকরো কাহিনী। বাদ্যযন্ত্র সহকারে এই কাহিনীগুলিই অভিনীত হয়। কাহিনীগুলি পুরাণ ও মহাভারতের এমন সমস্ত অংশ থেকে গৃহীত হয় যেখানে শক্তির প্রদর্শনের বর্ণনা আছে। শিব -দূর্গা – কালী অশুভ শক্তির বিনাশ করে ত্রিভুবনে কীভাবে শান্তির বাণী পৌঁছে দিয়েছিলেন তা প্রধানত তুলে ধরা হয় হাওড়ার প্রত্যন্ত গ্রামীণ মানুষের কাছে। আর এই সমস্ত লোকশিল্পের টানেই মাইলের পর মাইল পথ পেরিয়ে ভিড় জমান বহু মানুষ। যদিও করোনার চোখরাঙানিতে এবার এক ধাক্কায় পাল্টে গেছে প্রতিবছরের নীলষষ্ঠীর রাতের সেই চিত্রটি।
বন্ধ গাজনের উৎসব,বন্ধ ঝাঁপ – চড়ক। নীল সন্ন্যাসীদের সংখ্যাটাও হাতেগোনা। যতটুকু ধর্মীয় উপাচার না করলে নয়, সেটুকুই প্রথা মেনে মন্দিরে দু’একজন পালন করছেন। চারদিক জুড়ে কেবল নিস্তব্ধতা। লকডাউনের ফাঁকা রাস্তায় দেখা মেলেনি সঙেরও। নরোত্তম রায়, বলরাম দাস, লালমোহন ঘোষ মতো কালিকাপাতাড়ি শিল্পীদের বিশ্বাস বিশ্ব থেকে করোনা ভাইরাস দ্রুত দূর হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। তা-ই তাঁরা আশায় বুক বেঁধেছেন আবারও একটি চৈত্র সংক্রান্তির অপেক্ষায়।