সম্পাদকীয় : বাঙালিয়ানার অন্যতম উপকরণ চা। আর বাঙালি চা খাবেনা তা কীভাবে হয়! আর চা মানেই পাড়ার মোড়ে কিমবা ফুটপাতের ধারে আড্ডার আসর। সেই চা খেতে গিয়েই ইতিমধ্যেই ট্রোলের শিকার হয়েছেন তিন ব্যক্তি। তবু চা ছাড়া যে দিন চলে না।
তার চেয়ে চা’আড্ডাহীন দিনগুলো আরও ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে উঠেছে। মন উশখুশ করছে, ‘একটু পাড়ার চায়ের আসরে গিয়ে চা – আড্ডা করে আসি’। লকডাউনের সময়ে সেই প্রবণতা বন্ধ করতে এবার নিজে এগিয়ে এলেন পাড়ার তিন চা বন্ধু। শোভাবাজারের বাগিচার সামাজিক দূরত্ব মেনে সকল চা পিপাসুদের মধ্যে বিলোলেন চা।
বাঙালি লকডাউনে সবচেয়ে বেশি মিস করেছে চায়ের ভাঁড়ে তুফান তোলাকে। সোজা কথায় চাতক বাঙালি, কাঁহা তক আটকে থাকে বাড়ির চা – য়ে? চা বন্ধুদের দিনে একবার না দেখলে চা টু টা, সব বৃথা। চাল ডালের মতো এই চা – ও যে বড়ই গুরুত্বপূর্ণ। চা পেয়াসি বাঙালির অবস্থা এখন, ‘আমি ভজন, আমারে বোঝে ক’জন’ গোছের। বুঝেছেন খোকন, বিমল, শম্ভুবাবুরা। চা – টা ভালো হওয়া চাই যে। তাই চা বানালেন একজন, বাকিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিলিয়ে এলেন। চাড্ডা বন্ধুদের এক পলকে একটু দেখা হল। না, বেশি হলে ক্ষতি আছে।
‘চাড্ডা’ বন্ধুদের দেখাও হবে , চা’ও হবে আবার সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং রক্ষাও হবে। এক ঢিলে তিন পাখি মারলেন ওঁরা। কীভাবে? চাল-ডাল – খিচুড়ি – ডিমের পাশাপাশি সকালে মাটির ভাঁড়ে ধোঁয়া ওঠা গরম চা বিলি করলেন পাড়ার খোকনদা। এর জন্য পাড়ার চায়ের দোকানের শম্ভুদা, বিমলদাকেও ধরে আনেন। আসলে ওঁরা হলেন, ট্রাম্পের ভাষায় আসলি ‘চিঁওয়ালা’ থুরি সেরা চা রাঁধিয়ে।
তাই চা’টুকু দিয়েই একটু হাই হ্যালো করেই পরের জনের হাতে দিয়ে দিলেন চা। এভাবেই চায়ের আড্ডাকে সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং মেনে বজায় রাখলেন ওঁরা। খোকনবাবুর কথায়, “আমাদের সরকার যেভাবে মানুষের জন্য লড়াই করছেন সেই লড়াইয়ের একজন ক্ষুদ্র সাথী হিসাবে আমাদের এই উদ্যোগ।’ চায়ের পাশাপাশি অসহায় ৫০০ পরিবারের সকালে পেট ভরানোর দায়িত্বও নিয়েছেন পাড়ার খোকনবাবু। এক মুদি ব্যবসায়ীর উদ্যোগে ৫০০ পরিবারের ১৯৭০ জন অসহায় মানুষ পেলেন বিনামূল্যে চাল, ডাল, আলু, নুন, সাবানের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য।