নিজস্ব সংবাদদাতা : ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মতো বাংলাতেও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা।করোনা সতর্কতায় ‘জনতা কার্ফু’ এর দিনেই রেলের তরফে ৩১ শে মার্চ পর্যন্ত সমস্ত যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করা হয়েছে। এরকমই এক ভয়াল পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে করোনা সংক্রমণের হাত থেকে বাঁঁচবার অন্যতম উপায় ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার’ ও কার্যত বাজার থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে। বেশি দাম দিয়েও মিলছেনা এই জীবাণুনাশক। ই-কমার্স সাইট গুলোতেও তীব্র হাহাকার দেখা দিয়েছে।
এরকমই এক সংকটময় পরিস্থিতিতে মানুষকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার পৌঁছে দিতে এগিয়ে এলো গ্রামীণ হাওড়ার আমতা-১ ব্লকের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্ন দেখার উজান গাঙ’। সূত্রের খবর, সংস্থাটির পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তৈরি করা হচ্ছে এই জীবানুনাশক। ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব সায়েন্সের (বেঙ্গালুরু) রসায়নের বিজ্ঞানী অরিজিৎ জানার নেতৃত্বে রসায়নের অভিজ্ঞ শিক্ষক রাজকুমার দাস ও রসায়নের কৃতি ছাত্র সায়ন হাইতরা এই জীবাণুনাশকটি প্রস্তুত করেছেন। অরিজিৎ জানা জানান, তাঁরা মূলত অ্যালকোহল, প্রাকৃতিক অ্যালুভেরা, পাতিত জল ব্যবহার করে এই স্যানিটাইজারটি প্রস্তুত করেছেন।
তাঁদের তৈরি হ্যান্ড স্যানিটাইজার গ্রামীণ হাওড়ার আমতা-১ ও বাগনান-১ ব্লকের বিভিন্ন গ্রামের হাজারো মানুষকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পৌঁছে দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। সংস্থাটির সম্পাদক তাপস পাল জানান, “শিক্ষায় স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে আমরা সারাবছর কাজ করলেও, সারা বিশ্বব্যাপী উদ্ভুত এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে আমরা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী সমাজকে সেবা দেওয়ার লক্ষ্যেই অত্যন্ত দ্রুততার সাথে এই বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। “তিনি আরও বলেন, “প্রথম পর্যায়ে ৩০ মিলিলিটারের ২০০০ টি বোতলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রস্তুত করে মানুষকে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
“স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভূঁয়েড়া বি.এন.এস উচ্চ বিদ্যালয় ও সোনামুই ফতে সিং নাহার উচ্চ বিদ্যালয়। উদং – ফতেপুর – সোনামুই, আগুন্সী, ভূঁয়েড়া, পূর্ণাল গ্রামের বাসিন্দাদের হাতে পরিবার পিছু তুলে দেওয়া হচ্ছে একটি করে বোতল। প্রত্যেকের কাছে দিনে ৩ বার স্যানিটাইজার ব্যবহার, মাস্ক ব্যবহার ও বাড়ি থেকে না বেরানোরও আর্জি জানাচ্ছেন সংস্থাটি সদস্যরা। বাড়িতে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পৌঁছে দেওয়ার সাথে সাথে প্রসেনজিৎ, বিমল, অর্ঘ্য, সৌম্যের মতো উদ্যোমী তরুণদল স্থানীয় বাজারে বসা ‘সব্জি কাকু’, ‘ফল কাকু’ দের হাতেও তুলে দিচ্ছে কোভিড-১৯ সংক্রমণনাশক এই উপাদান। তবে তাঁদের অনেকের কাছেই অজানা – কীভাবে এই স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হয়।
তাঁদেরকে রীতিমতো হাতে ধরে শিখিয়েও দিচ্ছে তারা। সেই সঙ্গে সকলকে সতর্ক থাকতে, কোনোরকম গুজবে কান না দিতে অনুরোধ জানাচ্ছে এই যুবকরা। এই প্রয়াসকে একবাক্যে স্বাগত জানিয়েছেন গ্রামের বহু মানুষ। তাঁদের একজন রঘুনাথ পালের কথায়, “আমাদের মতো দিন আনা দিন খাওয়া সংসারে কখনোই ২০০-৩০০ টাকা দিয়ে স্যানিটাইজার ব্যবহার করা সম্ভব নয়। এই ধরনের উদ্যোগ সত্যিই গ্রামের বুকে খুব জরুরি। “১৮৯৮ সালের মহামারীতে স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর শিষ্যদের নিয়ে কোলকাতায় প্লেগার্ত মানুষের মাঝে মুক্তিদূত রূপে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বিবেকানন্দের ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ এই যুব সংগঠনও করোনা সংক্রমণ রুখতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ময়দানে নেমেছে।