নিজস্ব সংবাদদাতা : প্রায় দেড় মাস নিখোঁজ থাকার পর উদ্ধার এক যুবকের পচাগলা মৃতদেহ। পুলিশ সুত্রে জানা গেছে মৃত দিল মহম্মদ (৩৩) উলুবেড়িয়া থানা এলাকার সমরুখ নাজির পাড়ার বাসিন্দা। মঙ্গলবার ভোরে বাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে তপনা এলাকার একটি খড়িবোন থেকে প্লাস্টিকে মোড়া অবস্থায় উদ্ধার হয় তার পচাগলা মৃতদেহ। পুলিশ সুত্রে জানা গেছে পেশায় জরির কারবারি গুল মহম্মদের সাথে দীর্ঘদিন ধরেই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল এলাকার প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য তথা তৃনমূল নেতা নুরজামান কাজির স্ত্রী বর্তমান পঞ্চায়েত সদস্যা সেরিনা বেগম কাজির। বছর তিনেক আগে গুল মহম্মদের সাথে ঘর ছেড়েছিল সেরিনা। পরে আবার ফিরেও আসে।
সেই সময় গুল মহম্মদের বিরুদ্ধে তার স্ত্রীকে অপহরনের মামলা করেছিল নুরজামান কাজি। অভিযোগ পরেও বারবার গুল মহাম্মদকে প্রানে মারার হুমকি দিতো নুরজামান কাজি। গুলকে একাধিক মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল বলেও গুল মহম্মদের পরিবারের অভিযোগ। গত ২১ শে জানুয়ারি হটাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে যায় গুল মহম্মদ। পরিবারের তরফ থেকে উলুবেড়িয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পুলিশ সুত্রে জানা গেছে সোমবার রাতে পুলিশ কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। সেখান থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ তপনা এলাকার একটি খড়িবোন থেকে গুল মহম্মদের মৃতদেহ উদ্ধার করে। এরপরেই স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযুক্ত নুরজামান কাজির বাড়িতে ভাঙচুর চালায়।
উলুবেড়িয়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে, পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে এলাকার লোকজন। পরে হাওড়া গ্রামীণ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশিষ মৌর্যর নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও র্যাফ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং নুরজামান কাজির স্ত্রী সেরিনা বেগম কাজিকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। মৃতের স্ত্রী রেবাকা বেগম বলেন এর আগেও আমার স্বামীকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল নুরজামানের স্ত্রী। তার পর থেকেই আমার স্বামীকে প্রানে মারার হুমকি দিতো নুরজামান। তাকে বহু মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। তিনি আরো বলেন গত ২১শে জানুয়ারি স্কুটি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল গুল মহম্মদ। রাত নটা নাগাদ ফোন করে জানিয়েছিল ফিরতে দেরি হবে। তার পর থেকেই ফোন বন্ধ। তার আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
তার অভিযোগ বারবার পুলিশের কাছে যাওয়া সত্বেও পুলিশ কোনো কাজ করেনি। নুরজামান কাজি পরিকল্পনা করে তার স্বামীকে খুন করেছে বলে তার অভিযোগ। গুল মহম্মদের মা সফিনা বেগমের অভিযোগ গুল মহম্মদের টাকা পয়সার লোভেই নুরজামানের স্ত্রী সেরিনা তার সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলে ছিল। সেটা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিতো নুরজামান। তার ছেলেকে নুরজামান ই খুন করেছে বলে তিনি জানান। এই ঘটনায় উলুবেড়িয়া থানার পুলিশ। এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশ জিয়ারুল সেখ,মইনুদ্দিন সেখ ও নুরজামান কাজিকে গ্রেফতার করেছে। মইনুদ্দিন ও জিয়ারুল কে মঙ্গলবার উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ৬ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। হাওড়া গ্রামীণ জেলার পুলিশ সুপার সৌম্য রায় বলেন ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকি অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।