নিজস্ব সংবাদদাতা : বিবাহের আসর থেকে উপনয়নের পর্ব সব জায়গায় উপঢৌকন সাথে নিয়ে যাওয়া— বাঙালির চির পরিচিত রীতি।এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।বসন্তের মায়াবী সন্ধ্যায় সানাইয়ের সুরে যখন সাজো সাজো রব,তখন একের পর এক অতিথিরা হাতে উপহারের ডালি নিয়ে নবদম্পতির কাছে হাজির হচ্ছেন।আট থেকে আশির ভিড়ে মুখরিত।পার্থক্যটা হঠাৎই চোখে পড়।উপহারের পরিবর্ত হিসাবেও পাত্র-পাত্রীর পক্ষ থেকে আগত অতিথিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ উপহারের ঝোলা।নিজেদের বৌভাতে সবুজের ডালি উপহার দেওয়ার মধ্য দিয়ে এভাবেই সমাজের কাছে এক অভিনব বার্তা পৌঁছে দিলেন এই ‘আরণ্যক’ চিকিৎসক দম্পতি।
সূত্রের খবর,সম্প্রতি গ্রামীণ হাওড়ার বাগনান-১ ব্লকের বাঙালপুর গ্রামের চিকিৎসক অর্ণব সামন্তের সাথে সাত পাকে বাঁধা পরেছেন পাশ্ববর্তী জেলার পাঁশকুড়ার বাসিন্দা পেশায় চিকিৎসক মধুরিমা দে।এই নবদম্পতির বৌভাত অনুষ্ঠান উপলক্ষে আয়োজিত প্রীতিভোজের অনুষ্ঠানে আগত প্রায় ৬৫০ জন অতিথির হাতে তুলে দেওয়া হয় কাপড়ের ব্যাগ ও বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা।হঠাৎ এই আয়োজন কেন?— এই প্রশ্নের উত্তরে পাত্র তথা কোলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের শিশুরোগ ও সদ্যজাত বিশেষজ্ঞ অর্ণব সামন্ত জানান,”শিশুরাই আমাদের আগামীর সম্পদ।পেশার সূত্রে শিশুদের নিয়েই সবসময় আমাদের বাঁচা।একটা গাছকে যদি আমরা শিশুসুলভ ভালোবাসা ও অপত্য স্নেহে বড়ো করে তুলতে পারি তাহলেই আমাদের আগামী হয়ে উঠবে সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর।
“এই বার্তাকে সমাজের কাছে তুলে ধরার জন্য নিজেদের জীবনের এই শুভক্ষণকে বেছে নিয়েছেন এই যুগল।যত সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমেছে—আগত অতিথির সংখ্যাটাও ক্রমশ বেড়েছে।চিকিৎসক দম্পতি একের পর এক মানুষের হাতে তুলে দিয়েছেন মেহগিনি,বকুল,আকাশমণি,ইউক্যালিপ্টাস সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।পাশাপাশি,গাছ রোপণ ও তাকে মহীরুহে পরিণত করার বার্তা পৌঁছে দিতেও ভোলেননি তাঁরা।বৌভাতের অনুষ্ঠানে সবুজায়নের বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি যতটা সম্ভব প্লাস্টিক বর্জন করার চেষ্টাও করেছেন এই নবযুগল৷অতিথিদের খাবার পরিবেশনের জন্য কাগজের থালা ব্যবহার করা হয়েছে৷পাত্রী মধুরিমার কথায়,”প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সবুজকে রক্ষা করা ও সবুজকে আগলে রাখা আবশ্যক।ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও মানব সভ্যতা রক্ষার জন্যই আরও বেশি করে সবুজকে বাঁচিয়ে রাখা জরুরি।”
বিয়েবাড়ির ভুড়িভোজের সাথে সবুজায়নের এহেন বার্তায় প্রথমে অবাক হয়েছিলেন আগত অতিথিরা।কিন্তু,সুন্দর উপহার পেয়ে স্বভাবতই খুশি তাঁরা।বন্ধু অর্ণবের বৌভাতের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আমতা থেকে এসেছিলেন নয়াগ্রাম কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক কুমুদ মল্লিক।তিনি বলেন,”বিশ্বজুড়ে যখন এতো হানাহানি,ধর্ম নিয়ে এতো হিংসা,বিদ্বেষ—সেই কঠিন সময়ে দাঁড়িয়ে পরিবেশ ও আগামী প্রজন্মকে বাঁচানোর এই সামাজিক বার্তা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।” আর তাই হয়তো অশান্তির মাঝেও সবুজ শৃঙ্খল স্থাপনের মধ্য দিয়ে শান্তি,সম্প্রীতি ও পরিবেশকে বাঁচানোর ডাক দিয়ে গেলেন এই তরুণ চিকিৎসক দম্পতি।