নিজস্ব সংবাদদাতা : প্রায় দেড় বছর আগে বাগনানের নবম শ্রেণির ছাত্রী ঈশিতা দত্ত খুনের ঘটনা ঘিরে উত্তাল হয়েছিল গোটা উলুবেড়িয়া। সেই ঘটনায় যুক্ত দুইজনের সাজা ঘোষণা করলো উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালত। বৃহস্পতিবার উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (২) রতন কুমার দাস মুল অপরাধীদের অন্যতম সুষ্মিতা মন্ডলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং তার স্বামী মহিতোষ মন্ডলকে দোষ আড়াল করার অপরাধে এক বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেন। বাদী পক্ষের আইনজীবী ত্রিদিবেশ নন্দ বলেন যেহেতু মহিতোষ মন্ডল ইতিমধ্যেই আট মাস জেলে ছিলেন, সেই কারণে তিনি আরও চার মাস জেল খাটার পর মুক্তি পাবেন।
তবে এই ঘটনার মুল অভিযুক্ত সুস্মিতা ও মহিতোষের ছেলে শুভময় মন্ডল নাবালক হওয়ায় জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে তার বিচার চলছে। পুলিশ সুত্রে জানা গেছে গত ২৫ শে জুলাই ২০১৮ বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে গলায় নাইলন দড়ির প্যাঁচ দিয়ে খুন করা হয়েছিল বাগনান আদর্শ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী ঈশিতা দত্তকে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে ভারি কোন বস্তু দিয়ে মাথা থেঁতলে হাত পা বেঁধে খাটের তলায় দেহ রেখে পালিয়ে গিয়েছিল সুস্মিতা ও তার নাবালক ছেলে শুভময়। পরের দিন ২৬ তারিখ বাগনানের নবাসনের সুস্মিতার ভাড়া বাড়ি থেকে ঘরের দরজার তালা ভেঙে ঈশিতার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার দশদিন পর চেন্নাই এর একটি হোটেল থেকে সুস্মিতা, মহীতোষ ও তাদের নাবালক ছেলেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন মহীতোষ জামিন পেয়ে গেলেও জেল হেফাজতে ছিলেন সুস্মিতা। বুধবার দুইজনকে দোষী সাব্যস্ত করার পর মহীতোষকে হেফাজতে নেওয়া হয়। রায় ঘোষণার পর ঈশিতার বাবা বিমল দত্ত বলেন সুস্মিতা মন্ডলের ক্ষেত্রে আদালতের রায়ে খুশি হলেও মহিতোষ মন্ডলের ক্ষেত্রে আদালতের রায়ে তারা খুশি নয়। তাদের আইনজীবী ত্রিদিবেশ নন্দ বলেন এই ঘটনায় মোট আঠারো জন সাক্ষ্য দান করেছে। তিনি বলেন ঘটনার তদন্তে পুলিশের গাফিলতির কারণেই মহীতোষ মন্ডলের লঘু শাস্তি হয়েছে। এই বিষয়ে তারা উচ্চ আদালতে যাবেন বলেও তিনি জানান। উল্লেখ্য ঘটনার দিন বিকাল পাঁচটা নাগাদ টিউশন পড়তে বেরিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি বাগনান এন ডি ব্লকের ঈশিতা দত্ত।
খোঁজ করতে বেরিয়ে তারা জানতে পারেন শুভময়ের মা সুস্মিতা মন্ডলের সাথে ঈশিতাকে শেষবার দেখা গিয়েছিল। তারপরেই তারা বাগনানের নবাসনে শুভময় দের ভাড়ার বাড়িতে গিয়ে দেখেন বাড়িতে তালা ঝোলানো রয়েছে। সেদিন রাতেই নিখোঁজের অভিযোগের পর তারা যান শ্যামপুরের ঝুমঝুমিতে শুভময়ের গ্রামের বাড়িতে। সেখানেও ঈশিতার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরের দিন নবাসনের ভাড়া বাড়ির তালা ভেঙে ঈশিতার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়েছিল গোটা উলুবেড়িয়া। ঘটনার প্রতিবাদে ঝড় ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এলাকায় বন্ধ পালন করেন এলাকাবাসী। হয় একাধিক প্রতিবাদ সভা ও মোমবাতি মিছিল।